দ‌ক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্য চুইঝাল

932

খুলনা বিভাগে চুইঝাল এত জনপ্রিয় যে একে খুলনার কৃষিপণ্য হিসেবে ব্র্যান্ডিং করাই যায়। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারে আব্বাসের হোটেল চুইঝাল দিয়ে রান্না করা খাসির মাংসের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। চুইঝাল-মাংস খুলনার জিরো পয়েন্ট, শিববাড়ি ছাড়িয়ে এখন ঢাকায়ও প্রসার লাভ করেছে।

দিন কয়েক আগে গিয়েছিলাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। চুইঝালগাছের খোঁজ করতেই সঙ্গে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হীরামন সরকার জানালেন, শত শত গাছ দেখতে পাবেন, যদি পাশের চুইঝালের গ্রামে যান। সেখানে প্রায় সব বাড়িতে চুইঝালের গাছ লাগানোর প্রচলন আছে।

ঘুঘুদহ গ্রামের বারুইপাড়ায় গিয়ে হাজির হলাম আমরা। প্রায় ৫০ ঘর বারুই (পানচাষি) থাকে সেখানে। একটি বাড়িতে ঢুকে দেখলাম, সুপারিগাছ বেয়ে একটা নবীন চুইঝালের গাছ লতিয়ে উঠছে। সকালের সোনারোদে কচি সবুজ পাতাগুলো চকচক করছে। একটা আমগাছে আরেকটু বয়স্ক লতা। লতার কাণ্ড খসখসে ধূসর বাদামি হতে শুরু করেছে। লতার গিঁটগুলো থেকে শিকড় বেরিয়েছে। বাড়ির কর্তা বিশ্বনাথ দাস আরও বয়স্ক গাছ দেখাতে তাঁর পানের বরজে নিয়ে গেলেন। যেতে যেতে বললেন, ‘আমগাছে যে চুইগাছটা দেখেছেন, সেখানে একটা বয়স্ক গাছ ছিল। সাত হাজার টাকায় বেচে দিয়েছি। চার-পাঁচ বছরের পুরোনো গাছ ছিল। সেখানে গত বছর দুটো গাছ লাগিয়েছি।’

বিশ্বনাথের ২৪ শতক জমির পানের বরজে ২০-২৫টি চুইঝালের গাছ আছে। দুই বছরের পুরোনো একটা গাছ ব্যাপারীরা দেড় হাজার টাকা বলে গেছেন। বিক্রি করেননি। আর দুই বছর রাখতে পারলে দাম আট হাজার টাকা উঠতে পারে। চুইগাছ যত মোটা হবে, দামও তত বেশি হবে।

বিশ্বনাথ দাসের অভিজ্ঞতা হলো, শজনেগাছে চুইঝালের গাছ খুব ভালো হয়। ঝাল বেশি হয়, গাছের বৃদ্ধিও হয় দ্রুত। সুপারি, মেহগনি, আম, শিরীষ, নারকেলগাছকে অবলম্বন করেও চুইঝালগাছ বাড়তে পারে।

চুইঝালগাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল নেই। এই কাণ্ড বা লতা কেটে টুকরো টুকরো করে মাছ-মাংস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর গলে যাওয়া সেসব টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। খুব ঝাল হলেও এর একটা অন্য রকম স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে।

চুইঝালের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম piper chaba.পরিবার পিপারেসি। পান ও চুইঝাল একই পরিবারের দুই সহোদর। উঁচু জায়গায় চুইঝালগাছ ভালো হয়, গোড়ায় পানি জমলে গাছ পচে যায়। যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় এর চাষ বেশি দেখা যায়। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও রাজীবপুর উপজেলায়ও চুইঝালগাছের চাষ দেখেছি।

গাছে ফুল-ফল হয়। বীজ থেকে চারাও হয়। তবে শিকড়সহ গিঁট কেটে লাগালে সহজে চারা হয়। সম্ভাবনাময় এ মসলা গাছ নিয়ে আরও গবেষণা দরকার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.