শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুময় সাংস্কৃতিক অঙ্গন
ঢাকা: আর্টক্যাম্প, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বইয়ের পাঠ ও পর্যালোচনা, কারাগারের রোজনামচা ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে পাঠ, কবিতায় বঙ্গবন্ধু শ্রাবণের শোকগাঁথা, নৃত্যনাট্য-যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাজানো ছিলো সাংস্কৃতিক অঙ্গণের শোক দিবসের কর্মসূচি।
বুধবার (১৫ আগস্ট) স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস জাতীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরাও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে।
শিল্পকলা একাডেমি: মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস পালনের অংশ হিসেবে বুধবার শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় শোক দিবসের আয়োজন। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- এ দুই পর্বে বিভক্ত ছিলো সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজন।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
আলোচনা পরবর্তী সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত হয় ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা’ শিরোনামের নৃত্যনাট্য। কবি কামাল চৌধুরীর গ্রন্থণায় ও লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনা, সুর সংযোজন ও পরিচালনায় নৃত্যনাট্যটির পরিচালনায় ছিলেন ওয়ার্দা রিহাব।
এর আগে সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শিল্পকলা একাডেমির একাডেমির সর্বস্তরের কর্মকর্তা, শিল্পী ও কর্মচারীরা। এছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে টুঙ্গীপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া ‘শতবাউল শিল্পীদের শিল্পযাত্রা’ শীর্ষক আয়োজন।
সন্ধ্যায় একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে মঞ্চায়ন করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর মহান সংগ্রাম জীবন-ভিত্তিক ঐতিহাসিক নাটক ‘মুজিব মানে মুক্তি’। লোক নাট্যদল পরিবেশিত এই নাটকটির গ্রন্থণা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী।
মহাকালের ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নাটকের দল মহাকাল নাট্যসম্প্রদায় মঞ্চায়ন করেছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ষড়যন্ত্রকারীদের বুলেটে রক্তাক্ত হয় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার। ৭৫’ এর নির্মম ট্র্যাজেডির পর বারবার ক্ষতবিক্ষত হয় ইতিহাস। সে থেকে উল্টো পথে চলছে দেশ। জাতির জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে সুপরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়েই বিন্যাস্ত হয় নাটকটির কাহিনী।
আনন জামান রচিত এবং আশিক রহমান লিয়নের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহাকালের নিয়মিত নাট্যকর্মীরা।
জাতীয় জাদুঘর: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আয়োজন করে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। বিকেলে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনের এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে দেশের বিশিষ্ট কবি ও বাচিকশিল্পীগণ।
আয়োজনে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, অসীম সাহা, রবিউল হুসাইন, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, কামাল চৌধুরী, মুহাম্মদ সামাদ, নূহ-উল-আলম লেনিন, তারিক সুজাত, আনিসুল হক, আসাদ মান্নান, আলম তালুকদার, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুবী রহমান প্রমুখ।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, হাসান আরিফ, মাহীদুল ইসলাম, ডালিয়া আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, লায়লা তারান্নুম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট: কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ নিহত সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, খ্যাতিমান অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, সোনিয়া রেজা, শাহ আলম, বৃষ্টি রাণী সরকার, মাধবী সরকার, হাবিব উল্লাহ রিপন, দিলীপ সরকার, সোহেলী পারভীন মনি, পারুল আক্তার লোপা, শম্পা রহমান, অভিষেক ঘোষ, মাহফুজুল হাসান তনয় প্রমুখ।