কবিতায় আমার বঙ্গবন্ধু

947

হৃদয় থেকে উৎসারিত কিছু পঙ্ক্তিমালার নাম কবিতা। কবিতা বোধ, বিবেক ও চেতনাকে জাগ্রত করে। পাঠককে অনেক গভীরে যেতে হয় মর্মোদ্ঘাটন করতে। এই উপলব্ধি অনুভব করা অনেকটা নেশার মতো। এমন অনুভূতি কবিতা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন যখন আমি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আমার ভেতরে সেই মর্মান্তিক ঘটনার দুর্বিষহ স্মৃতি আঘাত দিতে থাকে অবিরাম। আঘাতে জর্জরিত হলে একপর্যায়ে তা কোনো না কোনোভাবে প্রকাশের দুর্মর সাহস সঞ্চারিত হয়। ফলে আমি যখন লেখালেখি শুরু করি, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে আমার লেখার একটি বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করি। প্রবন্ধে-নিবন্ধে যে বিষয়টি সহজে উপস্থাপন করা যায়, ছড়া-কবিতায় তা সম্ভব নয়। তবু, কবিতায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত থাকে, কারণ পাঠককে গবেষণায় নিয়োজিত হয়ে আরো নতুন কিছু আবিষ্কারের পথ উšে§াচন করে দিতে সচেষ্ট। পাশাপাশি মূল কথাটিও নির্ভয়ে বলার সুযোগ থাকে।

যখন বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল, তখন বেশ কিছু ছড়া-কবিতা লিখেছি। অল্পবিস্তর প্রকাশিত হয়েছিল, বাকিগুলো আলোর মুখ দেখতে অনেক সময় লেগেছে। সুতরাং কবিতাও যে একটি বড় হাতিয়ার তা বুঝতে বাকি নেই কারো। এই হাতিয়ার শুধু শত্রুকেই মোকাবেলা করে না, এই হাতিয়ার সমাজের সব অনিয়ম ভেঙে দিতেও সক্ষম। কিন্তু তারপরও কবিতা বিশ্বজয় করতে পারে না, কারণ কালে কালে যুগে যুগে সব শাসকরা এই ভাঙার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কখনো কখনো জীবন জীবনের বিরুদ্ধে থাকে, সমাজ সমাজের বিরুদ্ধে থাকে, সম্প্রীতি সম্প্রীতির বিরুদ্ধে থাকে। এই বিরুদ্ধাচরণ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যে কবিতা টনিক হিসেবে কাজ করে। তাই কবিতাকে এত ভয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লিখলে ভয়, ঘুষ-দুর্নীতি-মাদক নিয়ে কবিতা লিখলে ভয়, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে কবিতা লিখলে ভয়। তবু, কবিতাই আমার প্রাণ, কবিতাই আমার আরাধনা, কবিতাই আমার শক্তি- কারণ আমি এই কবিতায় আমার দেশের কথা বলতে পেরেছি, কবিতায় আমার মানুষের কথা বলতে পেরেছি, কবিতায় আমার বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে পেরেছি।

যে নাম উচ্চারিত হলে
যে নাম উচ্চারিত হলে
আমার বাবার কবর আলোকিত হয়
যে নাম উচ্চারিত হলে
আমার বোনের শরীর থেকে
নষ্ট দাগ মুছে যায়
ভায়ের হুইল চেয়ার প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান হয়
উš§াদিনী মায়ের ক্রন্দন থেমে যায়
যে নাম উচ্চারিত হলে
আমিও নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পাই
সে নাম উচ্চারণ করতে চাই।

যে নাম উচ্চারিত হলে
আমার স্বাধীনতার কথা মনে পড়ে
যে নাম উচ্চারিত হলে
আমার একাত্তরের কথা মনে পড়ে
যে নাম উচ্চারিত হলে
আমার বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে
জাতি ও জাতীয়তার জন্য
বার বার উচ্চারিত হোক সেই নাম
শেখ মুজিবুর রহমান।

অন্তরে মুজিবুর
বঙ্গভবনে যে মাছের সাথে করেছিলে তুমি খেলা
সেই মাছগুলি হারালো কোথায় প্রিয় মনিবের শোকে
বাংলাদেশের সারা মাঠ জুড়ে বসিয়েছিলে যে মেলা
সেই মেলা ভেঙে সোনার মানুষ পাথরে কপাল ঠোকে

তোমাকে হারিয়ে বুকের বারুদ আগুনে দিয়েছে ঝাঁপ
জ্বলেছে আগুন বড় অসহায় ঘটেনি বিস্ফোরণ
বরফে ঢেকেছি শীতল শরীর ছড়িয়েছে উত্তাপ
শত প্রতিবাদে ক্ষতবিক্ষত বিষাদযুক্ত মন

এখনো তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করে মাটি
রক্তের ঋণ শোধ করে দিতে ব্যর্থ বাঙালি কাঁদে
পদ্মা মেঘনা যমুনার বুকে দুখের উজান ভাটি
বনের পাখিরা গান ভুলে ব্যথা জানায় আর্তনাদে

মাটি নদী জল তরু ফুল ফল চিরশোকে শোকাতুর
ধুকধুক করে অন্তরে শুধু মুজিবুর মুজিবুর…

Leave A Reply

Your email address will not be published.