দল-মত না দেখে সঠিক তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

389

ঢাকা: দলীয় কর্মী বা ভোটার বিবেচনা না করে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্যদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে তালিকা তৈরি করতে হবে। ‘কে দলের আর কে নয়, কে ভোট দিল আর কে দিল না, সেটা দেখা যাবে না। ত্রাণ বিতরণে প্রকৃত সাধারণ মানুষের তালিকা তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব, তালিকা তৈরিতে প্রশাসনকে সহায়তা করুন। কোনো দুস্থ ও সাধারণ মানুষ যেন বাদ না পড়ে। যার অবস্থা খারাপ, দুস্থ, যার ঘরে খাবার নেই, তার ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা যেন সঠিক লোকদের হাতে যায় সেটা দেখতে হবে।’

দুস্থদের সহায়তায় আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশনকার্ড দেয়া হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার রমজানে ঘরে বসে তারাবির নামাজ ও রমজানে ইবাদত করার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন।

তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরও ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রচুর খাবার আছে। একটি মানুষও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। সেজন্য তালিকাটি ভালোভাবে হতে হবে। কেউ যেন বাদ না পড়ে, প্রশাসনকে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলেন।

দলের নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, আমি চাই- আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে। আর সেভাবে তালিকা করবে। এ সময় যারা হাত পেতে চলতে পারে না, তাদের তালিকা করতে হবে। সেখানেও যেন সঠিক তালিকাটা তৈরি হয়।

এ সময় প্রকৃত অসহায় মানুষকে খুঁজে পেতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। একই সঙ্গে মানুষের কষ্ট লাঘবে দেয়া ত্রাণে কেউ থাবা বসালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা সাহায্য দিচ্ছি। এই সাহায্যে কেউ থাবা দিক আমরা চাই না। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে আমরা বরদাশত করব না। এ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে একজন আরেকজনকে ফাঁসানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, কিছু জায়গায় আশপাশের লোক ষড়যন্ত্র করে একজন আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়। তদন্ত করতে গেলে দেখা যায়, সেখানে এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে এভাবে লেগে থাকবেন, সেটাও কিন্তু আসলে ঠিক নয়। সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আরও ৫০ লাখ লোকের রেশনকার্ড করা হবে : করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ১০ টাকা কেজির চাল দেয়ার জন্য আরও ৫০ লাখ মানুষের জন্য রেশনকার্ড করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৫০ লাখ মানুষের জন্য রেশনকার্ড করা আছে। ১০ টাকায় চাল পান। আমরা আরও ৫০ লাখ মানুষের রেশনকার্ড করে দেব। কারণ আমরা এমনি দিতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হয়ে যায়। সে ধরনের কিছু ঘটনা ঘটার পর আমরা এটা আপাতত স্থগিত করি।

তারাবির নামাজ বাড়িতেই পড়ুন : করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার রমজানে ঘরে বসে তারাবির নামাজ ও রমজানে ইবাদত করার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মসজিদে তারাবির নামাজ না পড়ে ঘরে বসে পড়ুন।

এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাবেন না : সামনে রমজান মাসে পণ্য পরিবহন বা খাদ্যসামগ্রীর যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে কেউ আসছে তারপর সংক্রমিত হচ্ছে। যাদের মধ্যে এতটুকু সন্দেহ আছে বা কেউ যেখানে ভাইরাসে আক্রান্ত, সেই এলাকা, সেই পরিবার থেকে অন্য কোথাও আপনারা যাবেন না। গেলে পরে আপনি অন্যকে সংক্রমিত করতে পারেন। সেজন্য সবাইকে যাতায়াতটা বন্ধ রাখতে হবে।

সতর্ক হোক অমানবিক নয় : করোনাভাইরাস নিয়ে অমানবিক হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি ঘটনার সূত্র ধরে তিনি বলেন, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক সময় অমানুষেও পরিণত হয়। যখন আমরা দেখি মায়ের একটু সর্দি, কাশ, জ্বর হল ছেলে, ছেলের বউ, ছেলেমেয়ে মিলে এমনকি তার স্বামী পর্যন্ত তাকে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে আসে! এর থেকে অমানবিক কাজ আর হতে পারে না। কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটবে? এ রকম আরও বহু কাহিনী আমরা শুনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিভাবে একটা মানুষকে বের করে দেয়! একজন ডাক্তার অসুস্থ হল তাকে এলাকা থেকে বের করে দিতে হবে! এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটবে বাংলাদেশে? বাংলাদেশের মানুষ তো এ রকম অমানবিক হওয়ার কথা নয়। এই বিষয়গুলো আমি সবার দৃষ্টিতে আনতে চাই। করোনা নিয়ে অমানবিক না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

কারও যদি সন্দেহ হয় তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তার পরীক্ষা করান। নিজেরাও সুরক্ষিত হোন। আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিকাজ বন্ধ রাখলে আমাদের চলবে না। যেহেতু কৃষিকাজটা খোলা মাঠে হয়, সূর্যের তাপ বা খোলা বাতাস- এটা কিন্তু এই করোনাভাইরাস থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। কাজেই কৃষিকাজটা যাতে চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।

তিনি আরও বলেন, দিনমজুর যারা কাজ পাচ্ছেন না, যান চলাচল শুরু হলে তারা আসছে ধান কাটার মৌসুমে ধান কেটে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তিনি বলেন, মন্দা এলে আমরা যেন তা মোকাবেলা করতে পারি।

আগামী তিন অর্থবছরে আমরা কিভাবে দেশের মানুষকে এই অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ধার করব, রক্ষা করব, সেই পরিকল্পনাও আমরা নিচ্ছি। সেভাবে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটু আগাম আমরা কিছু কর্মসূচি নিয়ে নিচ্ছি। কাজ ছাড়া চলবে না, কিন্তু যে যাই করুক, নিজেকে সুরক্ষিত রেখে লোকসমাগম না করে তা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এই ভিডিও কনফারেন্স শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।-যুগান্তর

Leave A Reply

Your email address will not be published.