বিষে ভরা খাবার: আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যত কী?

949

ধীনতার পর থেকে নিরাপদ খাবারের জন্য লড়ে যাচ্ছেন অনেকেই। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিখাত এ বিষয়ে এখন সরব। রমজান মাস এলেই ভেজাল বিরোধী অভিযানগুলো বেড়ে যায়। কিন্তু যেসব খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় তারচেয়েও বেশি জরুরি যেখানে খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে সেখানে নজর দেয়া।

নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। আজ রবিবার (১৯মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন।

তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

কার্বোফুরান, প্যারাকোয়েট এবং গ্লাইকোফসেট তিনটি কীটনাশক extremely hazardous (মারাত্মক ক্ষতিকারক), যা পৃথিবীর অনেক দেশে নিষিদ্ধ করেছে বিধায় আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাঁরা নতুন করে আর এই কীটনাশক তিনটির লাইসেন্স দেবে না। তবে আগে যে প্রায় ৩০০ লাইসেন্স হোল্ডার আছে তাঁরা আমদানি এবং উৎপাদন ও ব্যবসা করতে পারবে এবং পর্যায়ক্রমে এই কীটনাশক তিনটি বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে।

আমি ওই কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলাম (বিশেষ বিবেচনায়)। তখন আমি বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক। কঠিনভাবে আপত্তি তুলেছিলাম। যে কীটনাশক extremely hazardous (মানব দেহ এবং পরিবেশ) বলে স্বয়ং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্বীকার করে নিচ্ছে এবং নতুন করে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে আগের ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া যেমন স্ববিরোধী তেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এগুলো অতিসত্ত্বর তুলে নিতে হবে বাজার থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মত দিয়েছিলেন, তাঁরা বিকল্প চালু করে সহসাই তুলে নেবেন বাজার থেকে।

এরপর তিন বছর প্রায় পার হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরও তিন বছরের জন্য তা রাখা হবে, অর্থাৎ ২০২১ সালের পর পর্যায়ক্রমে বাজার থেকে এই কীটনাশক তুলে নেয়া হবে।

এই পর্যায়ক্রম হয়ত কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না।

চা পাতা এবং তুলার কীটনাশক ফসলের কীটনাশক হতে আলাদা। চা পাতা এবং তুলার কীটনাশক ভয়াবহ ক্ষতিকারক বিধায় তা ফসলে দেয়া মানা এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই চা পাতা এবং তুলার কীটনাশক হরদম দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উপায় নেই।

কিছুদিন আগে এক ল্যাব টেস্টেে আমাদের এক অতি প্রয়োজোনীয় খাদ্যে কীটনাশক এন্ডোসালফেন পাওয়া গেছে। এন্ডোসালফেন এত ক্ষতিকারক যে প্রায় ৮০টি দেশে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের চলছে। চলবে আরও শত বছর!

কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নয়। আমরা শুধু সমন্বয় করতে পারি।

গত ০৩/০১/১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর ডিজি মহোদয় বরাবর একটি উপজেলা বা একটি ইউনিয়নে PHI (প্রি হার্ভেস্ট ইন্টারভেল) প্র্যাক্টিসের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। যাতে কৃষক কীটনাশক স্প্রে করেই শস্য বাজারে না তোলে। অসংখ্যবার ফোনে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বলেছি সব খরচ আমরা দেব। কোন সাড়া পাইনি। এরপর তিনজন ডিজি অবসরে চলে গেছেন।

এই দেশে খাদ্য নিরাপদ হবে কিভাবে? সরকারী সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা কি নিরাপদ খাদ্য আইনে আছে?

সম্প্রতি এক ল্যাবের টেস্টে চালে সীসা, ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। ৩৩২টি নমুনায় ৫৪টিতে উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম, ২২টি নমুনায় উচ্চ মাত্রায় সীসা পাওয়া গেছে। অথচ চালে সামান্য পরিমাণও থাকতে পারবে না।

জানি না আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যত কী!

Leave A Reply

Your email address will not be published.