জেলা সফরে যাচ্ছে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক: সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আত্মানুসন্ধানে নেমেছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, সারা দেশে দলের ব্যাপক জনসমর্থন আছে, কিন্তু কোনো কারণে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এর নেপথ্যের কারণ বিশেষ করে—শুধু সরকারের কঠোর অবস্থান নাকি নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা ব্যর্থতাও আছে তা খুঁজে বের করতে চায় দলটি। পাশাপাশি দলের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফলবিপর্যয় ও হাজার হাজার নেতাকর্মীর কারাবন্দীত্বের কারণে ব্যাকফুটে থাকায় রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সেজন্য ১০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো দলের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক-সহ সম্পাদকদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে হামলা-মামলা, হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি ও বন্দী নেতাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের জন্য কি কি করছেন বা উদ্যোগ নিয়েছেন তা জানবেন কমিটির সদস্যরা। যেসব আসনের প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের তদারক করা হবে। যেখানে প্রার্থীরা কোনো উদ্যোগ নেননি সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে সহায়তা দেওয়া হবে। বিশেষ করে যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তিতে বিলম্বের কারণ চিহ্নিত ও আইনি সহায়তা দেবেন। আহতদের চিকিৎসা সহায়তা ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। এজন্য আগামী সপ্তাহ থেকে কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো সফর করবেন। এসব সফরে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে ঘরোয়া আলোচনা সভা ও উঠোন বৈঠকের মতো কর্মসূচিও নেওয়া হবে। সেখানে সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতেও যাবেন।
এইসব কমিটি গঠনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্বাপর সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কর্তৃক হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও আহতসহ ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দলীয় প্রার্থীরা কীভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন তা সমন্বয়পূর্বক কেন্দ্রকে সঠিকভাবে অবহিত করার জন্য বিভাগওয়ারি টিম কাজ করবে।’
দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের একজনকে আহ্বায়ক করে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিগুলোতে স্ব-স্ব বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সংযুক্ত হবেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকা বিভাগ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রংপুর বিভাগ, মোহাম্মদ শাহজাহান খুলনা বিভাগ, আহমদ আজম খান ফরিদপুর বিভাগ, মীর মোহাম্মদ নাসির বরিশাল বিভাগ, শওকত মাহমুদ চট্টগ্রাম বিভাগ, বরকতউল্লাহ বুলু রাজশাহী বিভাগ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার সিলেট বিভাগ, কবির মুরাদ কুমিল্লা বিভাগ ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।
নেতারা জানান, যেসব আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০দলীয় জোটের প্রার্থী ছিল সেসব আসনে দায়িত্বপূর্ণ নেতাদের সমন্বয় করে ওইসব প্রার্থীদের কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি ও ২০দলীয় জোটের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেলায় তিনদিনের একটি সফরে যাওয়া হবে। ওইসব জায়গায় বিএনপির দলীয় এমপি প্রার্থীরা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের কাছেই জানবেন তারা।
অপর একটি সূত্র মতে, এই মুহূর্তে দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে জেলা সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একটি হচ্ছে ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে পরিসংখ্যান দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করতে চায় সরকার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি করেছে। আরেকটি উদ্দেশ্য একান্ত দলীয়। তারা খতিয়ে দেখতে চায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায়। কেন তারা ‘জনপ্রিয়তাকে’ কাজে লাগাতে পারছে না। অর্থ্যাৎ সরকারি অনিয়মের পাশাপাশি দলের কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটিও খুঁজে বের করা হবে এই জেলা সফরে।