নিউইয়র্কে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনকে বুটে পিষে মারল পুলিশ

246

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের চেষ্টারে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নিহত হয়েছে। গেল ৩০ মার্চ তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) নিহত ড্যানিয়েল প্রুডের পরিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে তার নিহতের বিষয়টি জনসম্মুখে আসেনি। এদিন পুলিশের শরীরে ‍যুক্ত থাকা ক্যামেরার ভিডিও এবং অন্যান্য তথ্য উপাত্ত হাজির করে প্রুডের পরিবার।

প্রুডের ভাই জোয়ে জানান, শিকাগো থেকে রচেষ্টারে বেড়াতে আসে তিনি। ২২ মার্চ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ৯১১ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। নিখোঁজের দিনই রচেষ্টার পুলিশ আত্মহত্যার চেষ্টা করায় মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রুডকে আটক করে।

ভাইকে খুঁজে পেতে সহায়তার জন্য পুলিশকে কল করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। সংবাদ সম্মেলনে বলেন জোয়ে।

জোয়ে বলেন, তার এ হত্যাকাণ্ডকে কীভাবে দেখবেন আপনরা। সে নিরস্ত্র ছিল। রাস্তায় জামা-কাপড় ছাড়া সে বসেছিল। তার উপর পুলিশ চড়াও হয়। আর কতো ভাইয়ের মৃত্যুর পর সমাজ বুঝবে-এসব বন্ধ করা উচিৎ।

‘আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছ’

ভিডিওতে দেখা যায়, জামা-কাপড় খুলে রাস্তায় বসে আছে প্রুড। পুলিশ তাকে শুয়ে পড়তে বলছে, সে তাই করে। তার দু’হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পড়ানো হয়। হাতকড়া অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রুড চিৎকার করতে থাকে। কিছুক্ষণ সে চিৎকার করে। তখন বরফ পড়ছিল। সড়ক বাতির আলো ক্ষীণ হয়ে আসছিল। প্রুড চিৎকার বলেন , আমাকে তোমার বন্দুক দাও। এটা আমার প্রয়োজন।

পরে পুলিশ সদস্যরা তার মাথায় একটি সাদা টুপি পড়িয়ে দেয়। যা দিয়ে পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে যায়। তখন সেখানে করোনা মহামারীর শুরু দিক ছিল। ওই টুপিটা পড়ানো হয়েছিল, যাতে প্রুডের মুখ থেকে লালা বাইরে বেরোতে না পারে।

প্রুড টুপি সরানোর অনুরোধ জানায়

পরে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রুডের মাথা রাস্তায় ঠেসে ধরে। একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা দু’হাত দিয়ে ফুটপাতের রাস্তার উপর তার মাথা চেপে ধরে। বলতে থাকে, চুপ কর, শান্ত হও। পরে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা তার ঘাড়ের উপর বুট দিয়ে চেপে ধরে।

প্রুড বলছিলেন, তোমরা আমাকে মেরে ফেলছো। টুপিতে মাথা ঢাকা থাকায় তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, এবার থামো। আমার অস্ত্রটি দরকার। ক্রমেই তার শ্বাসপ্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল। একসময় সে চুপ হয় যায়।

তার নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায়, পুলিশ কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার কোনো নড়াচড়া ছিল না। মুখ থেকে লালা ঝরছিল।

তখন এক পুলিশ কর্মকতা বলছিলেন, সে মারা গেছে। অন্যজন বলছিলেন, তারা শরীর খুব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে দুই মিনিট প্রুডের মাথার ওপর বুট দিয়ে চেপে ধরেছিল ওই পুলিশ কর্মকর্তারা।

পরে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পরানো চুপিটি খুলে দেন। হাতকড়া সরিয়ে ফেলেন। অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর আগে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীও দেখা যায়।

প্রুডের ময়নাতদন্তে জড়িত এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনের কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগে মৃত্যু হয়েছে তার।

বিক্ষোভ

নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এখন প্রুড হত্যা মামলার তদন্ত করছে।

২৫ মার্চ পুলিশের নির্যাতনে নিহত হন জর্জ ফ্লয়েড। তার ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিল পুলিশের এক কর্মকর্তা। ওই অবস্থায় প্রায় ৯ মিনিট ছিলেন তিনি। ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে আকুতি জানানোর পরও ফ্লয়েডকে ছাড় দেয়নি পুলিশের কর্মকর্তারা। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিন্দা জানানো হয় পুলিশি বর্বরতার। দাবি তোলা হয় পুলিশ বিভাগ সংস্কারের।

ফ্লয়েডের ঘটনার দুই মাস আগে প্রুডের সঙ্গে নির্মম এ ঘটনা ঘটে যায়। হাসপাতালে ৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ মার্চ মারা যান প্রুড।

বুধবার রচেষ্টারের মানবাধিকারকর্মীরা দাবি জানান, প্রুড হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে বরখাস্তেরও দাবি জানান তারা।

পুলিশ বারবার প্রমাণ করছে তারা মানুষকে রক্ষার বা সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের মানুষ হত্যার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করার প্রশিক্ষণ তাদের দেয়া হয়নি। তাদেরকে উপহাস করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ড্যানিয়েল প্রুডের মতো মানুষকে সহায়তার প্রশিক্ষণ তাদের দেয়া হয়নি। বলেন অ্যাশলে গ্র্যান্ট নামের এক মানবাধিকারকর্মী।

সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ পর রচেষ্টারের পাবলিক সেফটি বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভ করে শ’খানেক মানুষ। বিল্ডিংটি পুলিশের হেডকোয়াটার্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তারা স্লোগান দেন, তোমরা কোথায় লুকিয়ে আছো?

এসময় কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তারা পুলিশ হেডকোয়ার্টে প্রবেশের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মেয়র লাভলি ওয়ারেন।

তবে প্রুডের নিস্তেজ করার ভিডিওকে ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, এরকম ভাবার কোনো কারণ প্রুডের সঙ্গে যা হয়েছে তা আমরা ধামাচাপা দিচ্ছি। সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.