এখন এক পোশাকে ৮ দিন ওসি প্রদীপ!
ঢাকা: কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের এমন পরিস্থিতি বা পরিণতি হবে। যিনি প্রতিদিন সকাল-বিকাল নতুন কাপড়, জুতো, ব্রান্ডের ঘড়ি ও বিদেশি পারফিউমের ঘ্রাণ নিতেন তিনি আজ ৮ দিন ধরে একই পোশাক পরে আছেন। সবার ধারণা এ পোশাকেই প্রদীপকে থাকতে হবে আরও তিন দিন। জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি শফিউল্লাহ শফি-এর একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হ্যান্ডসাম চেহারাটি অনেকটা বিমর্ষ অবস্থা। দামি ব্রান্ডের ঘড়ির পরিবর্তনে দুই হাত জোড় করে পরে আছে আইনের হ্যান্ডকাফ। বিদেশি পারফিউমের ঘ্রাণের পরিবর্তে নিজের শরীরের দুর্গন্ধেই অনেকটা অতিষ্ঠ প্রদীপ।
স্থানীয়দের মতে, যিনি স্টার মানের হোটেল কিংবা নিজের রুমকে অপরূপভাবে সাজিয়ে নিজের ইচ্ছামতো মনের তৃপ্তি মেটাতেন, তিনিই আজ পড়ে আছেন চার দেয়ালের বন্দি ঘরে। যিনি সকাল কিংবা বিকালে ব্যায়াম করে তরতাজা ফল, ডিম, দেশি মুরগি, ফ্রেস মাছ ছাড়া নাস্তা বা খাবার মুখে নিতেন না কিংবা টেবিলে বসতেন না- সেই প্রদীপ আজ কী খাচ্ছে বিধাতাই জানেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফের অনেক সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিককর্মী জানান, প্রতিদিন বিকালে ওসি প্রদীপ নিজের আস্থাভাজন পুলিশ সদস্যদের বহর নিয়ে বের হতেন। নাফ নদীর ওপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্যময় ট্রানজিট জেটিতে (প্রকাশ এমপি বদির জেটি) দুই পাশে শটগান নিয়ে এএসআই রামধর ও মিঠুন ভৌমিককে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। তারপর নিজের ইচ্ছামতো দৌড়াদৌড়ি ও ব্যায়াম সারতেন।
পাশাপাশি জেটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৪০ গজ অন্তর অন্তর ফলের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত তার বাণিজ্যের আস্থাভাজন ও ক্রসফায়ারে প্রধান সহযোগীরা। বিয়ার যতক্ষণ চলে ততক্ষণ সাধারণ মানুষ প্রবেশ দূরের কথা, কুকুর পর্যন্ত ঢুকতে পারত না জেটিতে। অসতর্কতা বসত কোনো কুকুরও ঢুকলে শাস্তি হতো জঘন্যভাবে।
অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফের অনেক কুকুরও মরেছে তার গুলিতে। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাস প্রদীপ আজ চার দেয়ালে বন্দি। মানুষ বাদ দিয়ে কুকুরও খুশিতে লাফাচ্ছে টেকনাফে।
তবে অনেকের দাবি, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মাদক ও রোহিঙ্গা দমনে অনেক ভালো কাজ করেছেন; যা অন্যান্য পুলিশ অফিসারের পক্ষে খুবই কঠিন হতো। কিন্তু যা অন্যায় ও অবিচার করেছেন, তাতে তার ভালো কাজগুলো ঢাকা পড়ে গেছে।
সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে দাম্ভিকতা হয়তো বিধাতা আর সহ্য করতে পারেননি। যে কারণে নির্মম পরিণতির শিকার হতে হয়েছে প্রদীপসহ তার সাঙ্গোপাঙ্গদের।
তবে স্থানীয়রা আশা করেছিল প্রদীপের ন্যায় তার বাণিজ্যের প্রধান সহযোগী হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দারোগা মশিউর, এএসআই রামধর ও মিঠুন ভৌমিকদের মতো যারা ছিল, তাদের সবার বিচার আল্লাহ দেখাবে।
এদিকে ৩১ জুলাই টেকনাফ বাহারছড়ার শামলাপুরের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ হত্যার ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৭ দিনের র্যা বের রিমান্ড শেষে সোমবার (২৪ আগস্ট) আদালতে তুলা হয়। এ সময় ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে একই কাপড়ে দেখায় উপস্থিত লোকজনের মাঝে নানা কৌতূহল ও সমালোচনা দেখা যায়।
বিশেষ করে ওসি প্রদীপকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। অনেকেই বলেন- ‘আল্লাহর বিচার পাল্লাই পাল্লাই।’ বিধাতা কখনও কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করেন না। একটু দেরিতে হলেও প্রকৃতির বিচার থেকে কোনো অপরাধী রেহাই পাইনি, পাবেও না। যার প্রমাণ দাম্ভিক প্রদীপ। যার নাম বলে টেকনাফে শিশুদের রাতে ঘুম পাড়ানো হতো আজ সেই প্রদীপ নিজেই ঘুমাতে পারছে না। সব মানুষকে তার পরিণতি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত বলেই মনে করেন স্থানীয় লোকজন।