দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর অসন্তুষ্ট খালেদার কড়া বার্তা
সরকারের দেয়া শর্তসাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ কারামুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কারান্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ওঠেন গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’য়। মুক্তির পর থেকে খালেদার কার্যক্রমে নেতাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে খালেদা কড়া বার্তাও দিয়েছেন।
গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, মুক্তির দিন হাসপাতাল থেকে ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে গাড়িবহরে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছানোর পর ওই দিন সন্ধ্যায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য তার সঙ্গে দেখা করতে ‘ফিরোজা’য় যান। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, আরেকজন যিনি নিকট অতীতে স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। এই দুজন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেলে বিএনপি প্রধান ওই দুই সিনিয়র নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কেন আসছেন? আপনারা মুক্তির জন্য কী করেছেন? সরকার মুক্তি দিয়েছে, আপনারা কী করেছেন?’
তখন ওই দুজন খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে আবারও তাদেরই একজন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যান। এসময় গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ওই নেতাকে বলেন, ‘আপনারা এসেছেন, ম্যাডাম খুশি হয়েছেন, উনি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, উনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই।’
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এমনকি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেও শিমুল বিশ্বাস চেয়ারপারসনের আশপাশেই ছিলেন। কিন্তু খালেদা মুক্তি পাওয়ার পর শিমুল বিশ্বাসকেও গুলশানের বাসায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি নয়াপল্টন থেকে ওইদিনই দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে বিছানাপত্র বের করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন বলে ২৪ মার্চ আইনমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে রিজভী আহমেদ চলে যান বিএসএমইউতে। খালেদা জিয়ার মুক্তির খবর শুনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে একটি টেলিভিশনের লাইভে রিজভী ভুল শব্দ উচ্চারণ করেন। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি বলতে গিয়ে ‘মৃত্যু’ বললে তার এ ‘স্লিপ অব টাং’য়ে হাইকমান্ডসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন। তাৎক্ষণিক নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে রিজভী আহমেদকে তার বিছানাপত্র নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
রিজভী প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করছে। এই পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসনের মুক্তির সময় দলের পক্ষ থেকে হসপিটাল কিংবা ম্যাডামের বাসার সামনে নেতাকর্মীদের না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেটা অমান্য করে তাকে (বিএসএমএমইউতে) যেতে কে বলেছে? দায়িত্বশীল পদধারীরা যদি দায়িত্বহীন কাজ করেন, তবে সে বিষয়ে অবশ্যই হাইকমান্ড ব্যবস্থা নেবে। তিনি টিভির লাইভে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর।’
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের একজন সদস্য বলেন, ‘রিজভী ভাই যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা স্লিপ অব টাং, এটা সবাই বোঝে। এটা নিয়ে আমি কারও কাছে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি একটা ব্রত (খালেদার মুক্তির দাবি) নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করেছিলাম। ম্যাডাম মুক্তি পাওয়ার পর স্বেচ্ছায় সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। দল বা ম্যাডামের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
অন্যদিকে ‘ফিরোজা’য় যেতে মানা করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় আমি ম্যাডামের কাছে যাচ্ছি না।’
আপনাকে দল এবং চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে গুলশানের বাসায় এবং কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের সঙ্গে তো আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। আমি কীভাবে বুঝব যে, আমি সেখানে নিষিদ্ধ। দলের পক্ষ থেকেও আমাকে কিছু বলা হয়নি। ১৫ তারিখ (১৫ এপ্রিল) যাক, তারপর সব বোঝা যাবে।’