সহজেই ভালো ইলিশ চেনার উপায়

475

চলছে ইলিশের মৌসুম। এ মৌসুমে অনেকে সর্ষে ইলিশের আয়োজন করেন, কারো ঘরে হয় ইলিশ পোলাও। ইলিশ ভাজা, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ দোপেঁয়াজা, ভাপা ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশের মালাইকারি-এসবও পছন্দ করেন অনেকে। ইলিশকে ঘিরে এসব আয়োজন যেন বাংলার সংস্কৃতিতে একাত্ম হয়ে আছে। কিন্তু ইলিশ না চিনলে এ আয়োজন কি সফল হবে?

১. ভালো ইলিশ চিনতে গিয়ে কেউ হয়তো আঙুলে টিপে দেখেন।
২. কেউবা ফুলকা দেখে শনাক্ত করেন তাজা ইলিশ।
৩. আবার কেউবা তরতাজা চেহারা দেখেই ইলিশ শনাক্ত করেন।

কিন্তু বাজারে তো হরেক রকমের ইলিশ- মেঘনার ইলিশ, পদ্মার ইলিশ, আবার আছে সমুদ্রের ইলিশ। এর ওপর আছে নকল ইলিশ- চৌক্কা, সার্ডিন, ইত্যাদি। এত কিছুর ভিড়ে কোনটা সেরা, কোনটায় প্রকৃত স্বাদ, অথবা কোনটাই বা প্রকৃত ইলিশ- এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন অনেক ক্রেতা।

ভালো ইলিশ চেনার উপায়

১. ভালো ইলিশের চোখ থাকে স্বচ্ছ। উজ্জ্বল। হিমাগারে রাখা ইলিশ আপনি চিনে নিতে পারবেন অতি সহজেই। কেননা, হিমাগারে রাখা ইলিশের চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে থাকবে এবং চোখ দেখাবে ঘোলাটে। লাল চোখ ইলিশের চেয়ে নীল চোখের ইলিশের স্বাদ বেশি। লাল চোখের ইলিশ তাজা হলেও এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

২. ইলিশের মুখ যত সরু তার স্বাদ তত বেশি।

৩. ইলিশ কেনার আগে অবশ্যই মাছের ফুলকা ভালো করে দেখা উচিত। তাজা ইলিশের ফুলকা লালচে ভাব থাকবে। তাজা না থাকলে ফুলকায় লালচে ভাব থাকবে না। সেটা ধূসর বা বাদামি রঙ ধারণ করবে।

৪. ইলিশ যতই সমুদ্র থেকে দূরে আসে তার দেহে লবণের পরিমাণ কমতে থাকে। স্বাদ তত বৃদ্ধি পায়। তাজা ইলিশের রয়েছে অন্যরকম গন্ধ। সে কারণে কেনার আগে মাছটির গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেবল তাজা ও ভালো ইলিশ থেকেই প্রত্যাশিত গন্ধ পাবেন। তাজা না হলে ইলিশের গন্ধ হারিয়ে যাবে। তাজা ইলিশ মাছ লোনা পানি থেকে ধরা হলে, মাছে লবণাক্ত গন্ধ থাকবে। মিঠা পানির হলে পানির মতো গন্ধ থাকবে। তবে স্বাদ বেশি হবে মিঠা পানির ইলিশে। তাজা ইলিশের দেহ থাকবে স্বাভাবিক। মাছের গায়ে চাপ দিলে স্পঞ্জ করে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

৫. দীর্ঘদিন বরফে রাখা ইলিশ শক্ত হয়ে যাবে। তাজা ইলিশে থাকবে চকচকে রঙ। ইলিশের প্রকৃত চেহারা; রূপালী রঙের ঝিলিক পাওয়া যাবে কেবল তাজা ইলিশেই। তাজা ইলিশের দেহে থাকবে পিচ্ছিল ভাব। ধরলেই টের পাওয়া যাবে। পেট দেখেও ভালো ইলিশ চেনার সুযোগ আছে। ইলিশ হাতে নিয়ে পেটে হালকা চাপ দিলে মুখ বা ফুলকা দিয়ে রক্ত বের হলে সেটি বাদ দেয়াই ভালো।

এমন হলে বুঝতে হবে এটি দীর্ঘদিন বরফে রাখা। পেট ফোলা থাকলে বুঝতে হবে পেটে ডিম আছে। যদিও ইলিশের ডিম অনেকের প্রিয়, তবুও ডিম হলে ছোট ইলিশের স্বাদ কমে যায়। কিন্তু বড় ইলিশ বিশেষ করে এক কেজির ওপরে হলে কোনো সমস্যা নেই।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, নদী ও সমুদ্রের দুটি ইলিশই টর্পেডো আকারের। এক্ষেত্রে পার্থক্য বোঝার উপায় হলো- নদীর ইলিশ একটু বেঁটে খাটো হবে, আর সাগরের ইলিশ হবে সরু ও লম্বা। পার্থক্য রয়েছে রঙের দিক থেকেও। নদীর ইলিশ বিশেষ করে পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ একটু বেশি উজ্জ্বল।

নদীর ইলিশ চকচকে বেশি হবে, রঙ হবে অত্যাধিক রূপালী। আর সমুদ্রের ইলিশ অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল হবে। তার মতে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার ইলিশের আকার হবে পটল আকৃতির। মাথা আর লেজ সরু আর পেটটা মোটা। নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.