৩৫৪০ রোহিঙ্গার প্রথম দল মিয়ানমারে ফিরতে পারে আগামী সপ্তাহে
ঢাকা: গত নভেম্বর মাসে প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নিয়েও দুই দেশ ব্যর্থ হয়। এবার রোহিঙ্গা ঢলের দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আবারও প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বর দমন পীড়নের মুখে সাত লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানে ‘জেনোসাইডের’ আলামত রয়েছে। নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কায় রোহিঙ্গাদের অনেকে এখনই ফিরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বাংলাদেশ কয়েক দফায় প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য তাদের নাম ও তথ্য মিয়ানমারকে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের কর্মকর্তারাই বলেছেন যে মিয়ানমার তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে স্বীকার করেছে। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে। আগামী সপ্তাহেই রোহিঙ্গাদের প্রথম দল মিয়ানমারে ফিরতে পারে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিয়ন্ট থু রয়টার্সকে টেলিফোনে বলেন, ‘আগামী ২২ আগস্ট তিন হাজার ৫৪০ জনকে প্রত্যাবাসনে আমরা সম্মত হয়েছি।’
এর আগে গত নভেম্বর মাসে রোহিঙ্গাদের বিরোধিতার মুখে প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ভেস্তে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ছোট পরিসরে প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। তবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য কাউকে জোর করা হবে না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন চায়।’
এদিকে রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের কর্মী মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেছেন, প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের মূল দাবিগুলো মানার ব্যাপারে রাজি হওয়া উচিত।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের যাচাই করা রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি কি না—এ বিষয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের তথ্য নিতে বলা হয়েছে। রয়টার্স জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এসংক্রান্ত একটি ই-মেইল বার্তা দেখেছে।
ই-মেইল বার্তাগুলোর একটিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরবে সেখানে ইউএনএইচসিআরের প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে। এ কারণে তারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রোহিঙ্গাদের জানাবে।
অন্যদিকে জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ রাখাইনে এখনো সৃষ্টি হয়নি। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করছে। গত জুলাই মাসে জাতিসংঘের একজন তদন্তকারী মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ করেছেন।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে রাখাইনে সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেতে দিচ্ছে না।
গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার একটি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছিল, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার মতো ন্যূনতম প্রস্তুতিও মিয়ানমারের নেই। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মিন থেইন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ট্রানজিট ক্যাম্পগুলোয় প্রস্তুতি চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ মাসের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেছেন, কাছের প্রতিবেশী দেশগুলো এ মাসের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু দেখতে চায়। বাংলাদেশও চায়, রোহিঙ্গারা দ্রুত তাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাক। কারণ এ দেশে তাদের উপস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে সমস্যা ততই বাড়বে।