হেলালের মোবাইলে এমন কি আছে? যার জন্য মিন্নিকে মে’রেছেন রিফাত!

435

নিউজ ডেস্ক: দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হ*ত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে হেলাল নামের এক বন্ধুর মোবাইল ফোন নিয়েছিলেন রিফাত। শনিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন হেলালের বোন পারুল বেগম ও স্ত্রী মনিকা বেগম। তবে কি কারণে বা কেন হেলালের মোবাইল ফোন রিফাত নিয়েছিলেন তা জানাতে পারেননি তারা।

এরই মধ্যে রিফাত হ*ত্যাকাণ্ডের পর থেকে গাঢাকা দিয়েছেন হেলাল। এ কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতে এসব বিষয়ে প্রথমে কথা হয় হেলালের স্ত্রী মনিকা বেগমের সঙ্গে। এরপর সেই কথোপকথনে যুক্ত হন হেলালের বড় বোন পারুল বেগম।

পারুল বেগম বলেন, অসুস্থতার কারণে গত ২৪ জুন আমি হেলালকে সঙ্গে নিয়ে আমার র’ক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্য বাজারে যাই। বাজারের মিষ্টিপট্টি এলাকায় আমরা পৌঁছলে রিফাত শরীফের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় রিফাত শরীফ হেলালকে ডেকে নিয়ে তার মোবাইল ফোনটি দিতে বলেন। হেলাল নিজের মোবাইল ফোনটি রিফাতের হাতে দিলে মোবাইলটি নিয়ে চলে যান রিফাত। এ সময় রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নিও ছিলেন।

পারুল বেগম আরও বলেন, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বাসায় এসে মাকে বিষয়টি জানাই। তখন মা বেশ কয়েকবার রিফাত শরীফকে কল দিয়ে মোবাইলটি দিয়ে যেতে বলেন। এরপর বিকেল ৫টার দিকে রিফাত আমার ভাই হেলালকে ডেকে নিয়ে মোবাইলটি দেন।

গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে পারুল বেগম বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন তা আমি জানি না। ওই মোবাইলে গোপন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কিনা তাও আমি জানি না। হেলালের স্ত্রী মনিকা বেগম বলেন, হেলালের মোবাইলটি রিফাত শরীফ নিয়েছিলেন বরগুনা পৌর মার্কেটের নিচে থাকাকালীন অবস্থায়। সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার দিকে। মোবাইলটি নিলেও আমার শাশুড়ির অনুরোধে বিকেল ৪টা কিংবা ৫টার দিকে ফিরিয়ে দেন রিফাত।

মনিকা বেগম বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন তা আমি জানি না। মোবাইলে গোপনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কিনা তাও আমার জানা নেই।

এদিকে হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেয়ার দুদিন পরই রিফাত হ*ত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হ*ত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার দুদিন আগে সোমবার রিফাত শরীফ হেলাল নামে তার এক বন্ধুর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ওই মোবাইল উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড মিন্নির দারস্থ হয়। পরে রিফাত শরীফের কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করে মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মা*রধরের শিকার হয় মিন্নি।

পুলিশের এই সদস্য আরও বলেন, নয়নের কথায় রিফাত শরীফের কাছ থেকে হেলালের ফোন উদ্ধার করে মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মার*ধরের শিকার হয় মিন্নি। পরে হ*ত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই মোবাইল নয়নের হাতে তুলে দেয়।

এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মা’রধরের শিকার হয়েছেন তার প্রতিশোধ নিতে নয়নকে মা’রধর করতে বলে। তবে মা’রধরের সময় নয়ন যাতে উপস্থিত না থাকে, সেটিও নয়নকে বলে দেয় মিন্নি। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিং করে রিফাত শরীফকে মা’রধরের প্রস্তুতি নেয় বন্ড বাহিনী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে রিফাত হ*ত্যায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমি জানি। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ।

এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং পুলিশের কৌশলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আট*কে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হ*ত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রি’মান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিলেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ইতোমধ্যে মিন্নি স্বামী রিফাত শরীফ হ*ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হ*ত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

রিমান্ড শেষে শুক্রবার মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়। ওই সময় স্বামী রিফাত শরীফ হ*ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মিন্নি। পরে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক। রোববার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আলোচিত রিফাত শরীফ হ*ত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৪ জন অভিযুক্ত রিফাত হ*ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ব*ন্দুকযু*দ্ধে নিহত হয়েছেন। সূত্র : জাগোনিউজ২৪

Leave A Reply

Your email address will not be published.