রোগীকে ৩ বছর পর অপারেশনের তারিখ দিল পঙ্গু হাসপাতাল!

481

ঢাকা: কয়েক মাস আগে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় যান ‘আলফা’ ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুম বিল্লাহর (২১)।

এরপর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক কবিরুজ্জামানের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। তার পরিচিত ডা. হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

এর পর চিকিৎসা নিতে গত ২৩ মার্চ রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) যান তিনি।

চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এক মাস পর যেতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তাকে তিন বছর পর ২০২২ সালের ২১ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়।

ভর্তির তারিখ জেনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান মাসুম বিল্লাহ। তার দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সময় এগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসপাতাল থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এর আগে তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে তিনি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন।

মাসুম বিল্লাহ বর্তমানে মিটফোর্ড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। এ হাসপাতালে গতকাল রোববার তার অস্ত্রোপচার হয়েছে।

মাসুম বলেন, ‘২৩ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগে যাই। টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তাররা আমার টেস্টের কাগজপত্র দেখেন এবং এক মাস থেরাপি নিতে বলেন। এক মাস থেরাপি নেওয়ার পর দেখা করি। তখন ২০ থেকে ২২ জনের ফাইলের সঙ্গে আমার ফাইলটি নেন চিকিৎসকেরা। অপেক্ষা করার পর তারা টিকিটে ২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির ডেট লিখে দেন।’

তিনি জানান, তিন বছর পর ভর্তির তারিখ দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না। পায়ে ব্যথা অনেক। আমার দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তারা জানান, সিরিয়াল অনেক লম্বা। আগে করতে চাইল বেসরকারি হাসপাতালে যান।

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের কনসালট্যান্ট হারুনুর রশিদ খান বলেন, হাসপাতালে লিগামেন্টের রোগী ভর্তির জন্য মাত্র দুটি বেড আছে। সপ্তাহে দুজনের বেশি ভর্তি করা যায় না। রোগী আসেন দিনে ৬০ জন। তাই অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ অপেক্ষার সারিতে থাকতে হয় রোগীকে।

একজন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ খান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। এখানে এটাই সিস্টেম। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে “না” বলা যাবে না। কিন্তু এখানে বেড স্বল্পতা রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ বেডের নতুন ভবন হচ্ছে, তখন সমস্যার কিছু সমাধান হতে পারে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.