দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নৌবন্দর হবে ঢাকার সদরঘাট

360

ঢাকা: বদলে যাবে সদরঘাট। ভিড়, যানজট, কুলিমুক্ত হবে চারপাশ। যেখানে সেখানে ময়লা থাকবে না। থাকবে না অবৈধ দোকানপাট ও হকার। যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে ১ নম্বর থেকে ২ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত পথ থাকবে যানবাহনমুক্ত। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে টার্মিনাল বিস্তৃত করা হবে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশে-বিদেশে’র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

রুকনুজ্জামান অঞ্জনের করা  বিশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, পৃথক জেলার জন্য থাকবে পৃথক টার্মিনাল। প্রতিটি রুটের জন্য থাকবে ডিজিটাল ডিসপ্লে। কোন যাত্রী কোন লঞ্চে উঠবেন, থাকবে তার তথ্য। অনলাইনেই কাটা যাবে যে কোনো রুটের টিকিট। এসব সুবিধা চালুর মাধ্যমে ঢাকার সদরঘাট নৌবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নৌবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদরঘাট টার্মিনালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ২৭ জানুয়ারি একটি সভা হয়। নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। এতে সদরঘাটের উন্নয়নে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, সদরঘাট টার্মিনালের সৌন্দর্য বাড়ানোসহ এটিকে আরও কার্যকর নৌবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রধান এই নৌবন্দর দিয়ে ১৬ জেলায় যাত্রী যাতায়াত করে। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য আমরা ১ নম্বর ব্রিজ থেকে ২ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত টার্মিনাল বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়েছি; যাতে প্রতিটি জেলার লোকজন পৃথক টার্মিনাল ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারে।

সচিব আরও জানান, যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ঘাটে আসা-যাওয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রকে নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে সদরঘাটের সামনের রাস্তায় কোনও যানবাহন চলবে না। এ পথে শুধু হেঁটে চলাচল করা যাবে। এ ছাড়া টার্মিনালের আশপাশে অবৈধ দোকানপাট সরানোর লক্ষ্যে আমরা এরই মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছি।

সূত্র জানান, ২৭ জানুয়ারির সভায় লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যানজটের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, যত্রতত্র টেম্পোস্ট্যান্ড গড়ে ওঠার কারণে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত আসতে কয়েক ঘণ্টা লাগে। বাহাদুর শাহ পার্ক, ভিক্টোরিয়া পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। মালিক সমিতি সদরঘাট এলাকায় আরও পন্টুন স্থাপনের কথা উল্লেখ করে বলে, এক পন্টুন থেকে অন্য পন্টুনে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

নৌযান ফেডারেশনের নেতারা বলেন, লঞ্চ টার্মিনালে ভেড়ানোর পর ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সে কারণে নদীতেই বর্জ্য ফেলে পানি দূষণ করা হয়। তাই নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে ডাম্পিং স্টেশন করার পরামর্শ দেন তারা। নৌপরিবহন অধিদফতরের প্রতিনিধি জানান, প্রত্যেক নৌযানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। এজন্য বিদ্যমান নৌযানগুলোর ডিজাইন পরিবর্তনের কথা বলেন ওই প্রতিনিধি। এ ছাড়া সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে যাতে নৌযানের কিচেনের বর্জ্য নদীতে না ফেলা হয় তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, প্রথমে লঞ্চ টার্মিনালের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি নৌযান শ্রমিকদের যাত্রীদের সঙ্গে সদাচরণের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। টার্মিনাল এলাকায় সিসি ক্যামেরা বৃদ্ধি করে মনিটরিং জোরদারেরও পরামর্শ দেন।

তিনি ঘাট এলাকায় ডিজেল ও পেট্রোলচালিত নৌকা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেন, সোলার, ব্যাটারি অথবা বৈঠাযোগে নৌকা চালানো যাবে।

জানা গেছে, সভায় সদরঘাটকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ১৯৬০ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শত বছরের এ নদীবন্দরকে ঢাকা (সদরঘাট) নদীবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে ঢাকা নদীবন্দর বিশ্বের সর্ববৃহৎ নদীবন্দর।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় হকার, চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য ও কুলি হয়রানি বর্তমানে অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে। টার্মিনালের ভৌত অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান ও সবুজ বৃক্ষরাজি শোভিত পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টার্মিনাল ভবনের ২৫০টি বিভিন্ন প্রকার দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। নতুন টার্মিনাল ভবনের ১১৮টি দোকান বরাদ্দ প্রদান বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরে যাত্রীদের সুবিধার্থে তিনটি ডিজিটাল ডিজপ্লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে যাত্রীদের জন্য কোন রুটের কোন নৌযানটি কখন ছাড়বে তার তথ্য থাকছে। এরই মধ্যে অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

এ ছাড়া তিনটি নৌঘাট স্থানান্তর, বর্জ্য অপসারণব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শ্মশানঘাট এলকায় আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা নদীবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নৌবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.