শুভ নববর্ষ, সবার মঙ্গল হোক

287

ঢাকা: জীবনের পথচলা কখনও থেমে থাকে না। আমাদের জীবন হতে আরও একটি বছর চলে গেলো। নতুন স্বপ্ন ও নতুন আশা নিয়ে এল একটি নতুন বছর: ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ। অর্জন-ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ সবকিছু নিয়ে ইতিহাসের গর্ভে চলে গেল ২০১৯। ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আরও নতুন নতুন সাফল্যময় অর্জনের প্রয়াসী হওয়ার সংকল্প নিয়ে নতুন বছর শুরু করার এই মুহূর্তে আমরা আমাদের পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। শুভ নববর্ষ!

২০১৯ সালের এই দিনে বিডি২৪লাইভ এর পাঠক-পাঠিকা, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন- শুভ নববর্ষ। নতুন বছর সকলের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনুক সেই কামনা করছি।

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস

আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। তবে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদযাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করতো।

তবে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়।

এতো গেলো যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

নতুন বছর পালন

আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।

ইংরেজি নতুন বছরকে ঘিরে বাংলাদেশেও উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আজ মধ্যরাতে থেকেই রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ব্যাপকভাবে নিউ ইয়ার উদযাপিত হবে। তবে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ছুটি থাকলেও আগামীকাল সরকারি বন্ধ নেই বাংলাদেশে।

এদিকে ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ইসরায়েল, দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অ-ইহুদি উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণই করেনি। যেমন সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।

বিভিন্ন দেশে নতুন বছরের প্রথম দিনটি পাবলিক হলিডে। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা। বিশ্বব্যাপী নিউ ইয়ার ডে সর্বজনীন একটি উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে।

কোন দেশে প্রথম বরণ করবে নববর্ষকে?

নতুন বর্ষ মানেই চোখে ভেসে ওঠে আকাশে আতশবাজির খেলা। সিডনির অপেরা হাউজ কিংবা লন্ডন ব্রিজ। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড নয় প্রথম নববর্ষ বরণ করে অন্য আরেক দেশ। প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দেশ টোংগো হচ্ছে বিশ্বের প্রথম দেশ সেখানে নববর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর গ্রিনিচ মান সময়ে যখন ঘড়িতে সকাল ১০টা তখনই সেখানে শুরু হবে ২০১৯ সাল। অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল চারটায় টোংগোতে ২০১৯ সাল শুরু হয়ে গেছে।

কোন দেশ সবার শেষে বরণ করবে ২০১৯কে?

সারা বিশ্বে নববর্ষ উদযাপনের প্রায় ১২ ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের ছোট কিছু দ্বীপ বরণ করবে নতুন বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রের বেকার দ্বীপ ও হাউল্যান্ড দ্বীপ সবার শেষে নববর্ষ বরণকারী। তবে সেখানে কোনো মানুষ বসবাস করে না।

তবে শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আমেরিকান সামোয়া। মার্কিন ওই দ্বীপটি টোংগোর ৫৫৮ মাইল দূরে অবস্থিত। যেখানে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় আগেভাগেই। সেখানকার বাসিন্দারা নতুন বছর বরণের ২৫ ঘণ্টা আগে থেকেই উৎসব করতে থাকে।

তাই দ্রুত কোনো ফ্লাইটে উঠে টোংগো থেকে আমেরিকান সামোয়া চলে যেতে পারলে দুইবার উদযাপন করতে পারবেন নতুন বছর।

ইংরেজি নববর্ষের একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। এমন এক সময় ছিল যখন বিশ্বব্যপী ইংরেজ রাজত্ব। সুকৌশলে ইংরেজরা প্রায় সারা পৃথিবী জয় করে ফেলেছে। লোকে বলাবলি করতো, ‘কোন সাম্রাজ্যে অস্ত যায় না সূর্য?’ উত্তর ছিল একটাই আর তা হচ্ছে, ইংরেজ সাম্রাজ্যে।

মজার বিষয় হচ্ছে যে, ফরাসী রাজা উইলিয়াম অ্যাংলো-সাক্সনদের পরাজিত করে যুদ্ধে বিজয় লাভ করলেন এবং হলেন ইংল্যান্ডের রাজা। তিনিই ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে ডিগ্রি জারি করে পহেলা জানুয়ারি থেকে ইংরেজি নববর্ষের সূচনা করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ইংরেজি নববর্ষের ধারা রয়েছে অব্যাহত। শুভকামনা আজ। সুস্বাগতম ইংরেজী নববর্ষ ২০১৯ সাল। সারাটি বছর শিশুরা নিরাপদে থাকুক। সৃষ্টিকর্তার এ পৃথিবী ধর্ম বর্ণ সকল মানুষের জন্য হউক নিরাপদ বাসযোগ্য। সকলের চলার পথ হোক নিরাপদ। জগৎ হউক নিরাপদ পরম ঠাঁই। চাওয়া এটুকুই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.