এসএমএস করে জেনে নিন আপনার স্মার্টকার্ডের সর্বশেষ আপডেট
দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড অনেক জেলায় দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই অনেকে নিজেদের কার্ড বুঝে পেয়েছেন। ২৫টি খাতে এই স্মার্ট কার্ড পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হবে। এখানে তিন স্তরে ২৫টির মতো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য খালি চোখে দেখা যাবে, দ্বিতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হবে বহনযোগ্য যন্ত্রাংশ এবং শেষ স্তরের জন্য কোনো ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্ট করার প্রয়োজন হবে। এটিকে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার জন্য আটটি আন্তর্জাতিক সনদপত্র ও মানপত্র নিশ্চিত করা হবে।
তবে সবার হাতে এখনো পৌঁছায়নি স্মার্টকার্ড। কিন্তু যারা এখনও পাননি তারা নিজেই জেনে নিতে পারেন কখন হাতে পাবেন আপনার কার্ডটি। ১০৫ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে বা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারবেন এ তথ্য।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের https://services.nidw.gov.bd/voter_center লিংকে গিয়ে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ অথবা ফরম নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণের তারিখ জানা যাবে। তবে যাদের স্মার্টকার্ড বিতরণের তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি তাদেরকে পরবর্তীতে আবার অনুসন্ধান করার কথা বলা হবে।
এসএমএসের মাধ্যমেও বিতরণের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম জানা যাবে। এসএমএসের মাধ্যমে জানতে SC লিখে স্পেস দিয়ে NID লিখে একটা স্পেস দিয়ে ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে। আর যাদের এনআইডি ১৩ ডিজিটের তাদের এনআইডির নম্বরের প্রথমে জন্ম সাল যোগ করতে হবে বলে জানান তিনি। যেমন- SC NID 1974xxxxxxxxxxxxx
যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে কিন্তু এখনো এনআইডি পাননি তারা SC লিখে স্পেস দিয়ে F লিখে স্পেস দিয়ে নিবন্ধন স্লিপের ফরম নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে D লিখে স্পেস দিয়ে yyy-mm-dd ফরমেটে জন্ম তারিখ লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে।
স্মার্ট কার্ড কি?
স্মার্ট কার্ড ২০১৬ হবে ১০ ডিজিটের
স্মার্ট কার্ডে ২৫ টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
২২ ধরনের নাগরিক সুবিধা বা সেবা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ এর নাগরিক এর জন্য একটি ডিজিটাল পরিচয় পত্র।
স্মার্ট কার্ড ২০১৬ যা যা দেখা যাবে–
ব্যাক্তির নাম (বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায়), পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নম্বর।
কার্ডের পেছনে ব্যাক্তি যে এলাকা থেকে ভোট দিচ্ছেন তার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান্ উল্লেখ করা থাকবে।
স্মার্ট কার্ডের চিপ (তথ্যভান্ডার) এ থাকবে ৩২ ধরনের তথ্য, যা মেশিনে পাঠযোগ্য।
এবারের স্মার্ট কার্ডের সাথে পূর্বের কগজ দ্বারা ল্যামিনেট করা কার্ডের বেশ পার্থক্য রয়েছে। এবারের কার্ডটি প্লাস্টিকের (পলিমার) তৈরি, তাই এটি হবে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
কার্ডটির মেয়াদ করা হয়েছে ১০ বছর পর্যন্ত।
নারীদের ক্ষেত্রে পূর্বের কার্ডে স্বামীর নাম ছিল, পিতার নাম ছিল না। অপর দিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে কার্ডে স্ত্রীর নাম ছিল না, যা বৈষম্য মূলক বলা হচ্ছিল। এবার নারীদের স্মার্ট কার্ডে স্বামীর নামের পরিবর্তে থাকছে পিতার নাম।
কার্ডের চিপ-এ ব্যাক্তির পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মনিবন্ধন নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবা ও স্বামী বা স্ত্রীর মৃতুসংক্রান্ত তথ্য, প্রতিবন্ধি বা অসমর্থতার তথ্য রয়েছে।
স্মার্ট কার্ডের কভারে রয়েছে, জাতীয় ফুল, জাতীয় পাখি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও চা-পাতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ও বর্তমান জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ইত্যাদি। দেশের ৯ কোটি ভোটার কে স্মার্ট কার্ড বিতরণের এই প্রকল্প গ্রহন করা হয় ২০১১ সালে, এজন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যায় করা হয়েছে।
স্মার্ট কার্ড ২০১৬ নিরাপত্তা –
স্মার্ট কার্ডে ২৫ টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এগুলো তিনটি স্তরে ভাগ করা। প্রথম স্তরের গুলো দেখতে পারবেন খালি চোখে। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হবে বিশেষ যন্ত্রের। আর শুধুমাত্র ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্ট এর মাধ্যমে দেখা যাবে তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তির পরিচয়পত্রের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চক্তি করতে হবে নির্বাচন কমিশনের সাথে।
স্মার্ট কার্ডের সুবিধা : যেসব সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
যে ২২ টি কারণে আপনি স্মার্ট কার্ডের সুবিধা ব্যবহার করবেন।
স্মার্ট কার্ডের সুবিধা গুলা আপনার নাগরিক সুবিধা গুলো পেতে সাহায্য করবে। স্মার্ট কার্ডটি প্রয়োজন হবে ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে-
আয়করদাতা সনাক্তকরণ নাম্বার পেতে। শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলার জন্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি ও নবায়নের জন্য। পাসপোর্টের আবেদনের ও নবায়নের জন্য। যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য। ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য। চাকরির আবেদনের জন্য। বিমা ও স্কিমে অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে। বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে। স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে। ব্যাংকের হিসাব খুলতে। ব্যাংক ঋন গ্রহন বা পরিশোধের ক্ষেত্রে। নির্বাচনের ভোটার শনাক্ত করতে। সরকারি ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে। সরকারি ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগীতার ক্ষেত্রে। টেলিফোন-মোবাইলের সংযোগের ক্ষেত্রে। ই-টিকেটিং এর জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে। আসামী ও অপরাধী শনাক্তকরনের ক্ষেত্রে। আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার পাওয়ার ক্ষেত্রে, এবং সিকিউরড ওয়েবে লগ-ইন করার জন্য।
‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র করে, পরিচয় দিন গর্ব ভরে’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, কার্ডের প্রয়োজনীয়তা ও নাগরিক সেবার বিষয়ে জানানো হচ্ছে।
স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের সময়ে ব্যাক্তির হাতের সব আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করা হবে, এবং কাছে বিদ্যমান কাগজের তৈরি কার্ডটি জমা দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড পেতে নাগরিকদের পুরনো কার্ড জমা দেওয়ার পাশাপাশি ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে পুরনো কার্ডটি তুলে তা জমা দিয়ে স্মার্ট কাড নিতে হবে।
স্মার্ট কার্ড দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই, সহজে নকল করা সম্ভব নয়।