‘তবু আমারে দেব না ভুলিতে’

আজ বিদ্রোহী কবির প্রয়াণ দিবস

329

ঢাকা: জ্যৈষ্ঠের খরতাপময় দিনে তার আবির্ভাব ছিল ঝড়ের মতো। তবে বিদায় নিয়েছিলেন শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ানোর দিনে। আসা-যাওয়ার এ পথেই তিনি অনন্তকালের জন্য ঠাঁই করে নিয়েছেন মানুষের মনে চিরবিদ্রোহী, অসাম্প্রদায়িক এক মানুষ হিসেবে। বাংলাদেশে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন জাতীয় কবির মর্যাদায়। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণবিরোধী মুক্তির আন্দোলন  থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান ছিল অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। আজ ১২ ভাদ্র (২৭ আগস্ট), এই বিদ্রোহী, মানবতাবাদী কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়াণ দিবস। তার জীবনকাল ৭৭ বছরের হলেও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। তবে প্রায় দুই যুগের সেই সৃষ্টিশীল সাহিত্যও বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ও বাঙালি জনজীবনের অতুলনীয় অমূল্য সম্পদ।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় যে মানুষটি আবির্ভূত হয়েছিলেন ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ রূপে, ঢাকার পিজি হাসপাতালের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) কেবিনে তা অস্তমিত হয়ে পড়েছিল ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তাকে। বিদ্রোহী কবি মহিমান্বিত হন বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে। ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই’- গানের বাণীতে স্পন্দিত তার এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করে। জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে এই ব্যক্তিত্বকে।

সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলার সাহিত্যাকাশে কবিরূপে নজরুলের অভ্যুদয় শুধু ধূমকেতুর সঙ্গেই তুলনীয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন, ‘…আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,/ দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

নজরুলের সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় বৈষম্য ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রবল উচ্চকিত। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত বিদ্রোহী কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। একদিকে ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, অন্যদিকে শ্যামা সঙ্গীত লিখে তিনি বাঙালি মানসের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আরও সুগভীর করেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের আর্তি বিশেষভাবে প্রকাশ পায় তার রচনায়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন-প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন দিনব্যাপী স্মরণ করছে আজ বিদ্রোহী কবিকে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে তাকে নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.