দোহারে নদী ড্রেজিং ও তীর রক্ষা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

364

ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই এলাকায় অবস্থিত বসতবাড়ি, হাইওয়ে, রাস্তা-ঘাট, মাদ্রাসা-মসজিদ ও ফসলী জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা পদ্মা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা পাবে ও ভূমি পুনরুদ্ধার হবে।

শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, পদ্মা নদীর বাম তীর বরাবর প্রচণ্ড ভাঙনের ফলে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ অনেক এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা-দোহার মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহৃত ঢাকা দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁধ-কাম-রাস্তাসহ প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট এবং কৃষি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙনের সন্মুখীন।

পূর্বে প্রকল্প এলাকায় অস্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষার কাজ করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের মাধ্যমে ২৪ কি.মি. ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ড্রেজড মেটেরিয়াল নদীর দু’পাড়ে ফেলে ভূমি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, এর ফলে প্রায় ২৫ বর্গ কি.মি. (২৫০০ হেক্টর) ভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। পদ্মা নদীর হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি বিবেচনায় নিয়ে ফিজিক্যাল ও ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং এর মাধ্যমে ড্রেজিং এর পরিমাণ, এ্যালাইনমেন্ট ও ড্রেজড মেটেরিয়াল ডাম্পিং এরিয়া নির্ধারণ করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি বছর শুরু করে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

একনেক বৈঠকে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। সভায় ৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নিমিত্ত ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প (আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল: ১ম সংশোধিত) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, জাপানী বিনিয়োগকারিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে আড়াইহাজারে অতিরিক্ত ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াও পুনর্বাসন ব্যয়, জরিপসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।

নেয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, ভাসানচর এবং স্বর্ণদ্বীপে পর্যটক টানতে সড়ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়কের অন্তর্ভুক্ত। সড়ক দুটি হচ্ছে, লক্ষ্মীপুর-চরআলেকজান্ডার-সোনাপুর সড়ক এবং সোনাপুর মান্নাননগর-চরজব্বার-ষ্টিমারঘাট সড়ক। নোয়াখালীর সঙ্গে দ্বীপ এলাকা হাতিয়া, ভাসানচর, স্বর্ণদ্বীপে যাতায়াতের জন্য একমাত্র সড়কপথ সোনাপুর হতে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মার্কেট প্রমোশন সেন্টার স্থাপিত হলে দরিদ্র্য প্রান্তিক তাঁতিরা ন্যায্য মূল্যে তাঁদের উৎপাদিত তাঁত বস্ত্র বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সভায় জানানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশের যেসব স্থানে তাঁত শিল্প রয়েছে সেখানে তাদের জন্য প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সিলেটের মনিপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাঁত শিল্প বিকাশে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

সভায় ২৯৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোট মনি নিবাস নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার এবং ১টি ছোটমনি নিবাসের হোস্টেল পুন:নির্মাণ করা হবে। সেইসাথে শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা, তাদের পরিচর্যা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.