দেশের প্রতি ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ সময়ে তিনি দেশের প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বালাতে তার সরকারের লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।আজ বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলক উন্মোচনককালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালানো। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এছাড়া শেখ হাসিনা দু’টি গ্রিড সাবস্টেশন এবং দেশের আরো ২১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং রোগে ভুগে কেউ যেন মারা না যায় ও অন্ধকারে না থাকে সে লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই প্রত্যেকে শিক্ষিত হোক। প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলুক।বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এ কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিচ্ছে। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও আমরা বেশি পরিমাণে ভুর্তকি দিচ্ছি। আর এর মাধ্যমে আমরা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নিজহাতে সুইচ বন্ধ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা চাই না বিদ্যুতের অপচয় হোক। দেশের প্রত্যেক এলাকা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২০০ থেকে ১৮ হাজার ৯শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি এবং ১৪ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়াও আমরা ভারত থেকে ছয়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করেছি এবং এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপাল ও ভুটান থেকে হাইড্রো ইলেক্ট্রিসিটি ক্রয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।তিনি বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার পারমাণবিক বিদ্যুতের মত বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জনগণ এ থেকে উপকৃত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নতুন যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো : ঘোড়াশালের কোড্ডায় ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, গাজীপুর ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, দাউদকান্দি ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ফেঞ্চুগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, নোয়াপাড়া ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মুন্সিগঞ্জের কমলাঘাটে মুন্সিগঞ্জ ৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিদ্দিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুৎকেন্দ্র (গ্যাস টারবাইন) ও সিদ্দিরগঞ্জ ২২৫ সমন্বিত বিদ্যুৎকেন্দ্র (দ্বিতীয় ইউনিট)।
শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে এমন ২১টি উপজেলা হচ্ছে : মৌলভীবাজার সদর, গাইবান্ধার সাখাটা, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, নরসিংদীর মনোহরদী, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও কালাই, নওগাঁর পোরশা, রাজশাহীর মোহনপুর ও দূর্গাপুর, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী, চট্টগ্রামের পটিয়া ও হাটাহাজারী, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলা। দু’টি গ্রিড সাবস্টেশন হলো নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ৪০০/২০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন ও খাগড়াছড়ি ১৩২/৩৩ কেডি গ্রিড সাবস্টেশন।
প্রধানমন্ত্রী পরে কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার ও খাগড়াছড়ির উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অর্জন ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।