দলগত পারফরমেন্সে সিরিজে সমতা আনলো বাংলাদেশ
লডারহিল : ওপেনার তামিম ইকবাল-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং নৈপুণ্য এবং মুস্তাফিজুর রহমান-নাজমুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিং-এ সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারালো সফরকারী বাংলাদেশ। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা আনলো সাকিবের দল। ব্যাট হাতে তামিম ৭৪ ও সাকিব ৬০ রান করেন। বল হাতে মুস্তাফিজুর-নাজমুল ৩টি করে এবং সাকিব ২টি উইকেট নেন। লডারহিলে প্রথম খেলতে নেমেই জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজে প্রথম ম্যাচ হেরে যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলে দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে এটি ছিলো বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচ। নিজেদের অভিষেক ম্যাচে টস হারে বাংলাদেশ। তাই ব্যাটিং-এ নামতে হয় টাইগারদের।
ব্যাটিং-এর শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যাশলে নার্সের বোলিং নৈপুণ্যে দলীয় ৭ রানে ওপেনার লিটন দাস ও ২৪ রানে মুশফিকুর রহিম আউট হন। ৫ বলে ১ রান করে ফিরেন লিটন। ব্যাটিং-এ প্রমোশন পেয়েও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিকুর। ৪ বলে ৪ রান করেন তিনি।
ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা সৌম্য সরকারের ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। ১৮ বলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। অবশ্য শুরুটা চমৎকার ছিলো তার। আউট হবার আগে ১টি করে ছক্কা ও চার মারেন তিনি। সৌম্যকে শিকার করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমো পল।
দলীয় ৪৮ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সৌম্য। তিন ব্যাটসম্যানের আউটের মাঝেও ভড়কে যাননি আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল। তাই ঐসময় এক প্রান্ত আগলে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রেখে ১৯ বলে ২৭ রান করেন তামিম।
আগের ম্যাচে প্রথম বলেই শূন্য হাতে আউট হওয়া আত্মবিশ্বাসী তামিম চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সাথে জুটি বাঁধার সুযোগ পান। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই বড়-বড় জুটি গড়েছিলেন তামিম-সাকিব। তিন ম্যাচে জুটিতে ৩৮৫ রান করে বিশ্বরেকর্ডও গড়েন তামিম-সাকিব। তাই এবার সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে তামিম-সাকিবের বড় জুটি প্রত্যাশা করেন ক্রিকেটপ্রেমিরা।
ক্রিকেটপ্রেমিদের প্রত্যাশা মিটিয়েছেন তামিম-সাকিব। ১৩ দশমিক ১ ওভারেই দলের স্কোর শতরানের কোটা স্পর্শ করান তামিম-সাকিব। দলের স্কোর তিন অংকে পৌঁছে দেবার পরই টি-২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি।
৩৫তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পর বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন তামিম। ১৬তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডিয়াম পেসার আন্দ্রে রাসেলের প্রথম পাঁচ বল থেকে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার আদায় করেন তামিম। তবে ঐ ওভারের শেষ বলে বিদায় নিতে হয় ৪৭ রানে জীবন পাওয়া তামিমকে। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৭৪ রান করেন তামিম। সাকিবের সাথে জুটিতে ৫০ বলে ৯০ রান যোগ করেন তামিম।
দলীয় ১৩৮ রানে তামিম ফিরে যাবার পর বাংলাদেশের হাল ধরেন সাকিব। সাথে সঙ্গী হিসেবে পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দু’জনে মিলে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হবার আগে ৩৮ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬০ রান করেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ও ২০১৬ সালের মার্চের পর টি-২০তে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাকিব।
এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১০ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান। বল হাতে ক্যারিবীয়দের পক্ষে নার্স ও পল ২টি করে উইকেট নেন।জয়ের জন্য ১৭২ রানের বড় টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ওপেনার এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।আন্দ্রে ফ্লেচারের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন পিঞ্চ হিটার আন্দ্রে রাসেল। দু’জনে মারমুখী মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন। তবে তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান মুস্তাফিজুর। ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১০ বলে ১৭ রান করা রাসেলকে ফিরিয়ে দেন ফিজ।
৩৩ রানে ২ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাপ কিছুক্ষণ পর আরও বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন ও অধিনায়ক সাকিব। মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান মারলন স্যামুয়েলস ও উইকেটরক্ষক দিনেশ রামদিনকে বিদায় দেন রুবেল-সাকিব। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩ বলে ১০ রান করে সাকিবের শিকার হন স্যামুয়েলস। ১১ বলে ৫ রান করা রামদিনকে থামান রুবেল। ফলে ৫৮ রানে ৪ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এরপর জুটি গড়েন ফ্লেচার ও রোভম্যান পাওয়েল। বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। ফলে ১৪ ওভারে ১১০ রান পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এসময় ৩৬ বলে ৬২ রান দরকার পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।তবে ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফ্লেচার-পাওয়েলের জুটিতে ভাঙ্গন ধরান বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। আগের ২ ওভারে ১৫ রান দেয়া নাজমুল বিদায় দেন ফ্লেচারকে। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৪৩ রান করেন ফ্লেচার।
দলীয় ১১৬ রানে ফ্লেচার যখন ফিরে যান তখন ম্যাচ জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিলো ৩৪ বলে ৫৬ রান। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের নৈপুণ্যে শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা প্রয়োজনীয় রান তুলতে পারেননি। ফলে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান করে ক্যারিবীয়রা।
৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৩ রান করা পাওয়েলকে মুস্তাফিজুর ও ১টি করে চার-ছক্কায় ৭ বলে ১১ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে আটকে দেন সাকিব। আর শেষ ওভারে নার্স ও পলকে তুলে নিয়ে টি-২০তে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর দলকে জয়ের স্বাদ নেন নাজমুল।মুস্তাফিজুর ও নাজমুল ৩টি করে এবং সাকিব ২টি ও রুবেল ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের তামিম।আগামীকাল একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস ক ব্র্যাথওয়েট ব নার্স ১
তামিম ইকবাল ক পল ব রাসেল ৭৪
মুশফিকুর রহিম ক রাসেল ব নার্স ৪
সৌম্য সরকার ক পাওয়েল ব পল ১৪
সাকিব আল হাসান ক অতি (ওয়ালটন) ব পল ৬০
মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৩
আরিফুল হক অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (৫ উইকেট, ২০ ওভার) ১৭১
উইকেট পতন : ১/৭ (লিটন), ২/২৪ (মুশফিকুর), ৩/৪৮ (সৌম্য), ৪/১৩৮ (তামিম), ৫/১৬৭ (সাকিব)।
বোলিং :
স্যামুয়েল বদ্রি : ২-০-১৪-০,
অ্যাশলে নার্স : ৪-০-২৫-২ (ও-১),
আন্দ্রে রাসেল : ৪-০-৩৩-১,
কেমো পল : ৪-০-৩৯-২ (ও-৪) (ও-১),
কেসরিক উইলিয়ামস : ৩-০-২৯-০,
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট : ৩-০-২৯-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস (টার্গেট ১৭২ রান) :
আন্দ্রে ফ্লেচার ক সাকিব ব নাজমুল ৪৩
এভিন লুইস এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ১
আন্দ্রে রাসেল কু মুশফিকুর ব মুস্তাফিজুর ১৭
মারলন স্যামুয়েলস ক লিটন ব সাকিব ১০
দিনেশ রামদিন এলবিডব্লু ব রুবেল ৫
রোভম্যান পাওয়েল ক মুশফিকুর ব মুস্তাফিজুর ৪৩
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ক লিটন ব সাকিব ১১
অ্যাশলে নার্স ক আরিফুল ব নাজমুল ১৬
কেমো পল বোল্ড ব নাজমুল ২
কেসরিক উইলিয়ামস অপরাজিত ০
স্যামুয়েল বদ্রি অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৯) ১০
মোট (৯ উইকেট, ২০১ ওভার ) : ১৫৯
উইকেট পতন : ১/৫ (লুইস), ২/৩৩ (রাসেল), ৩/৪৮ (স্যামুয়েলস), ৪/৫৮ (রামদিন), ৫/১১৬ (ফ্লেচার), ৬/১৩১ (ব্র্যাথওয়েট), ৭/১৪৬ (পাওয়েল), ৮/১৫৮ (নার্স), ৯/১৫৮ (পল)।
বোলিং :
আবু হায়দার : ৪-০-২৬-০,
মুস্তাফিজুর : ২-০-৫০-৩ (ও-৫),
রুবেল : ৪-০-৩৫-১ (ও-২)।
সাকিব : ৪-০-১৯-২ (ও-১),
নাজমুল : ৪-০-২৮-৩ (ও-১)।
ফল : বাংলাদেশ ১২ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যাচ সেরা : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।