গুজব শুনে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা

629

‘এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছে, আরেকজনকে আওয়ামী লীগ অফিসে ধরে নিয়ে গেছে’-এমন গুজব ছড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করেছে একটি কুচক্রী মহল। আর এই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে আজ শনিবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাথর, ইট-পাটকেট নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। হামলাকারীদের কয়েক জনের হাতে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল।

এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জিগাতলা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। দেড় ঘণ্টা ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার পর বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আধা ঘণ্টা পর আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েক জন শিক্ষার্থীও সামান্য আহত হয়।
এদিকে, হামলার পর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হামলার ঘটনটি পূর্বপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা দেশকে অশান্ত করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাদের বেশ ধরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের দিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। পাথরের নমুনা দেথে আমি বলতে পারি, এই হামলা পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাথরগুলো সচরাচর রাস্তায় পাওয়া যায় না; এগুলো শিলা পাথর।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলায় আওয়ামী লীগ অফিসের ১৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দিচ্ছে। পাথর-লাঠি-আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী হামলা করতে পারে না। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা দেশকে অশান্ত করতে চায় বলে এটা করছে। এটা বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারীরা তোমরা ঘরে ফিরে যাও। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাকারীরা ব্যাগে করে এই পাথর নিয়ে এসেছে। তাদের কারো কারো হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। এই হামলার স্টাইল দেখে আমি বলতে পারি, এটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা করতে পারে না। কারণ, এটা কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। ছাত্রদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ও মতলববাজ বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা এসব কর্মকান্ড করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি পাথর দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই পাথর আজকে স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে ওই বিএনপি এবং তাদের সাম্প্রদায়িক দোসরদের হাতে। তারা নতুন নতুন স্কুল ড্রেস তৈরি করছে। মিরপুর থেকে নকল আইডি কার্ড তৈরি করছে। এরপর তারা স্কুল ও কলেজের ড্রেস পরে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসের দিকে তেড়ে আসছে। এত দুঃশাসন। এরা স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী নয়। এরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত। যারা আজকে দেশকে অশান্ত করতে চায়, সেই জন্য তারা আমাদের পদত্যাগ চায়। বাংলাদেশে কোনোদিনও অশান্তি দূর হবে না যদি বিএনপি নামক এই দলটির অস্তিত্ব থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলার গুজব শুনে সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে কিছু শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে ছুটে যায়। এসময় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে শিক্ষার্থীরা। তখন কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বের হয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। একদল আন্দোলনকারী ছাত্র পার্টি অফিসের দিকে আসতে থাকলে ঝামেলা বাঁধে। ছাত্ররা হঠাৎ করে জিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। ছাত্ররা বাধা না মানলে বাক-বিতণ্ডা হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের দিকে এগুলে পার্টি অফিসে অবস্থান করার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে সীমান্ত স্কয়ার এলাকায় অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা আবার এগোতে চাইলে আওয়ামী লীগকর্মীরা ফের তাদের ধাওয়া দেয়।

এদিকে, সংঘর্ষের সময় গুলি ছোড়ার দাবিও করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ। তবে কারা গুলি ছুড়েছে তা তারা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সীমান্ত স্কয়ারের (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার) সামনে অবস্থান করছেন। আর পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন ঝিগাতলা মোড়ে।

এর আগে ঝিগাতলা এলাকায় সকাল থেকে ওই এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা দুইটার দিকে বিজিবি গেটের সামনে শত শত শিক্ষার্থীর একটি অংশের ওপর হঠাৎ করে হেলমেট পরা, লাঠি হাতে ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল যুবক হামলা চালায়। তাদের একজনের হাতে অস্ত্রও দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওই সময় বিজিবির সদস্যরা গেট থেকে সামনে এসে যুবকদের থামানোর চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও হামলাকারীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। এরপরই শুরু হয় গুজব। এক শিক্ষার্থী মারা গেছে বলে মূহূর্তের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারী একজনকে আওয়ামী লীগের এক কর্মী ধরে নিয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। পরে আন্দোলনরত ছাত্ররা হঠাৎ করে ঝিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কারও কারও হাতে লাঠিও দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং নয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.