দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করুন – ‘নিসচা’ যুক্তরাষ্ট্র শাখার মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ
ঢাকায় ব্যাপারোয়া চালকের বাসের ধাক্ষায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধন করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) যুক্তরাষ্ট্র শাখা। গত ২রা আগস্ট বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালীসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব স্বীকৃতি বড়ুয়ার সার্বিক তত্তবধানে এই মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। নিসচা’র প্রধান উপদেষ্টা, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবি এম ওসমান গনী বলেন বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের এই আন্দোলন কোন ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন । বাংলাদেশে ছাত্র নিহত হয়েছে তাই আজ আমারা এখানে সমবেত হয়েছি, কারণ আমরা সবাই চাই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে। নিরাপদ সড়কের এই দাবি আমার আপনার সকলের দাবি এবং এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মূলধারার রাজনীতিবিদ জনাব মোরশেদ আলম বলেন একটি জাতি গঠনে ছাত্রদের অবদান অনেক বেশি। বাংলাদেশ হয়েছে এই ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে, ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে আইনকে হাতে নেওয়া ঠিক নয়, আইন চলে তার নিজস্ব গতিতে। নিরাপদ সড়ক চাই অত্যন্ত জরুরি, আমি নিজেও সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পরিবারদের সদস্যদের হারিয়েছি। আমি ছাত্রদের এবং নিসচা’র এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। মূলধারার রাজনীতিবিদ জনাব ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন নিরাপদ সড়ক মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে জাতি লড়াই করতে শিখেছে, সে জাতিকে দমানো যায়না, ঠিক তেমনি এই নতুন প্রজন্মের কণ্ঠকে রোধ করা যাবে না। তাই নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন তাদের কণ্ঠ রোধ না করে এবং এই দাবিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের উত্তর উত্তর সমৃদ্ধির জন্য এবং সোনার বাংলা গড়ার জন্য সবাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন নিরাপদ সড়কের দাবি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি, তাই আমিও তাদের এই দাবিকে সমর্থন করি। ইতিমধ্যে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ন্যায্য দাবি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীপরিষদ মেনে নিয়েছেন, এবং এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু কিছু কিছু দেশবিরোধী এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে, তাই আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। সংগঠনের কার্যকরী সদস্য আনোয়ার হোসেন তার বলেন একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না, আমরা এখানে সমবেত হয়েছে সেই কান্না যেন কারো জীবনে না আসে। তাই বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমাদের পরিপূর্ণ সমর্থন দেওয়া উচিৎ। জ্যামাইকা বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী বলেন আজকে বাংলাদেশে পদ্মার পারে আমাদের সন্তানেরা যে আন্দোলন করছে তার সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করি। মানুষের মৃত্যু নিয়ে যারা তামাসা করেন, তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি, এবং মন্ত্রীসভা থেকে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। আশা করছি জনগণের সরকার জনগণের ভাষা বুঝবেন এবং তাদের দাবি বাস্তবায়ন করবেন।
মানববন্ধনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন স্বপন তার বক্তব্যে বলেন, নিরাপদ সড়কের এই দাবি নতুন কোন দাবি নয়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে এই দাবি করে আসছেন। আপনারা জানেন ১৯৯২ সালের পূর্বে বিআরটিএ যে লাইসেন্সগুলি দিয়েছিলেন, সমস্ত লাইসেন্স ইলিয়াস কাঞ্চন বাতিল করিয়েছেন। কারণ বিআরটিএ কর্মকর্তারা তখন ঘুষ খেয়ে, কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে অবৈধভাবে লাইসেন্স দিয়েছিলেন। লাইসেন্স বাতিল করার কারণে শ্রমিক নেতারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে ভিবিন্ন সময় আক্রমণ করে, এমনকি মেরে ফেলারও চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি একটুও বিচলিত হননি। আজকে মাননীয় সরকারের কাছে দাবি জানাই ফিটন্যাস বিহীন গাড়ী এবং লাইসেন্সে বিহীন চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিন, কারণ একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) যুক্তরাষ্ট্র শাখার সদস্য সচিব স্বীকৃতি বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেন, এই প্রবাসে আমরা সমবেত হয়েছে আমাদের দেশের টানে, নাড়ির টানে এবং আমাদের সন্তানদের টানে। কারণ নিরাপদ সড়কের দাবি আপনার আমার সকলের দাবি। একটি দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীরা আজ জেগে উঠেছে এই নিরাপদ সড়কের দাবিতে। আমরা তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আপনারা জানেন এতিমধ্যে এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে, নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে, চালকদের সুশিক্ষিত করার জন্য যে দাবিগুলো উঠে এসেছে, বাংলাদেশের মাননীয় সরকার এই দাবিগুলো মেনে নিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আসুন শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতির পাশাপাশি, এই দাবি বাস্তবায়নে সরকার এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করি। সাথে সাথে দেশবিরোধি কুছক্রিমহল যেন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে, সেই ব্যাপারে সতর্ক হই।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ আলী ও আতিকুর রহমান সুজন, কার্যকরী সদস্য আহনাফ আলম, ইমাম কাজী কায়ুম, মোঃ আলম মিয়া, প্রমুখ। নিসচা’র এই মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক খসরু, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল পাটোয়ারি, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, কার্যকরী সদস্য যথাক্রমে হাসিনা বিনতে সুমী, আফরোজা হোসেন ও লুতফা খানম, একারামুল হক সাবু, মঞ্জুরুল আলম বিটি, রওশন বেগম, ফারুক হোসেন মজুমদার, নুরুল মোঃ রইজি, সমীর ফারুক, শেখ ফারুক, শাহিনুর আলম, লিটন, মোঃ আফনান হোসেন, প্রমুখ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মনিরুল ইসলাম রনি এবং শামিম মাহমুদ।