আরও এক মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন ডা. সাবরিনা, শিগগিরই চার্জশিট

250

ঢাকা: রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা চৌধুরী। তিনি জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান। গত বছর ভুয়া করোনা সনদ দেওয়ার দায়ে গ্রেপ্তার হন তার স্বামী আরিফুল চৌধুরী। ২০২০ সালের ১২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় ডা. সাবরিনাকেও। এ মামলায় সাবরিনাসহ নয়জনের বিচার চলছে। পরে ডা. সাববিনার বিরুদ্ধে দ্বৈত ভোটার ও একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন। এ মামলায় তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক রিপন উদ্দিন বলেছেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ মাসেই ডা.সাবরিনাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা করব।’

সাবরিনার পাশাপাশি আর কেউ অভিযুক্ত হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

মামলার বাদী গুলশান থানা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আইন অনুযায়ী মামলা চলবে। আমাদের অনুরোধ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে সবাই যেন সাবধানতা অবলম্বন করেন। ডা. সাবরিনার মতো কেউ যেন দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অপরাধ না করেন।’

গত বছর ৩০ আগস্ট ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বর্তমানে সাবরিনার দুটি এনআইডি কার্ড সক্রিয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি টের পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে ইসির কাছে তথ্য চেয়েছে। সাবরিনা ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় দ্বিতীয়বার ভোটার হন। তিনি প্রথমে ভোটার হন সাবরিনা শারমিন হোসেন নামে। একটিতে জন্মতারিখ দেওয়া ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর। অন্যটিতে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর। প্রথমটিতে স্বামীর নাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন আর এইচ হক। আর দ্বিতীয়টিতে স্বামীর নাম লেখা হয়েছে আরিফুল চৌধুরী।

মামলা দায়ের করার পর তদন্ত করেন বাড্ডা থানা পুলিশের এসআই মমিনুল ইসলাম। এরপর তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত সাত দফা সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। ওই দিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ৫ মে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় এরপর আর কোনো তারিখ ধার্য করা হয়নি।

সাবরিনার আইনজীবী প্রণব কান্তি ভৌমিক বলেছেন, ‘ইলেকশন কমিশনের দায়ের করা মমালাটির তদন্ত চলছে। এখনও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার কোনো মেরিট নেই। কারণ, সাবরিনা নির্বাচন কমিশনের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন‌্য আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশন যাচাই করে তাকে এনআইডি কার্ড দিয়েছে। তাহলে তারা কী যাচাই করলো? নির্বাচন কমিশন এর দায় এড়াতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীকে এ মামলায় আসামি করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন,‘আশা করব, এ মামলায় পুলিশ তাকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। আর যদি চার্জশিট দেয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে। যদি না দেয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে ওই কর্মচারীকে আমরা এ মামলার আসামি করার আবেদন করব।’

গত বছর ২২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ মামলায় সাবরিনার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তিনি কারামুক্ত হতে পারেননি। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন ডা. সাবরিনা। কারামুক্ত হতে হলে তাকে এ মামলাতেও জামিন পেতে হবে। এজন্য তার আইনজীবী আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাবরিনার করোনার জাল সনদের মামলা :
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার নামে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণা, জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগে ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে উজ্জল সরকার নামের এক প্রকৌশলী সাক্ষ্য দেন। এরপর গত ২৭ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় বিচার কার্যক্রম এগোয়নি।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার এগিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ আছে। এজন্য সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ করা যায়, সে চেষ্টা করবো।’

এ বিষয়ে সাবরিনার আইনজীবী প্রণব কান্তি ভৌমিক বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত মামলাটিতে যে ১৭ জন সাক্ষ‌্য দিয়েছেন, তাদের কেউই সাবরিনার নাম বলেননি। কেউ বলেননি, সাবরিনা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চরম অন্যায় করা হয়েছে সাবরিনার সঙ্গে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে ডেকে নিয়েছে। সে এসেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যা আইনের পরিপন্থী। আর যে জাল সার্টিফিকেটের কথা বলা হয়েছে, সেই সার্টিফিকেটে যে দুই চিকিৎসক স্বাক্ষর করেছেন তাদের আসামি বা সাক্ষী করা হয়নি। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের কথা চার্জশিটে আসলেও তাকে আসামি করা হয়নি।’

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয় জেকেজি হেলথকেয়ার। এর বেশিরভাগই ভুয়া বলে ধরা পড়ে। এ অভিযোগে গত বছর ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট এ মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জশিটভুক্ত অন‌্য আসামিরা হলেন—আরিফুল চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইন্সেসের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা, বিপ্লব দাস ও মামুনুর রশীদ। তারা সবাই কারাগারে আছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.