আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে হাজী সেলিম

183

ঢাকা: সম্মেলনের ১১ মাসের বেশি সময় পর ১০২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। নতুন কমিটিতে রাখা হয়েছে আলোচিত-সমালোচিত হাজী সেলিমকে। ঢাকা-৭ আসনের এ সংসদ সদস্য উপদেষ্টামণ্ডলীর দুই নম্বর সদস্য হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ এই কমিটি অনুমোদন দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিগত কমিটিতে সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের কমিটিতে থেকেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে ঢাকা-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

সম্প্রতি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের সহযোগীরা রাস্তায় নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধর করার পর ব্যাপক আলোচনা হয়। গত ২৫ অক্টোবর রাতের ঘটনায় পরের দিন ২৬ অক্টোবর সকালে জাতীয় সংসদের সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, এ বি সিদ্দিক দিপু, মো. জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দু-তিনজনকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা।

ওই দিন দুপুর থেকে র‍্যাব সদস্যরা রাজধানীর চকবাজারের ২৬ দেবীদাস ঘাট লেনে ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ী’-তে অভিযান চালান। অভিযান শেষে অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে দেড় বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ সময় পুরান ঢাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-রাজনীতিক হাজী সেলিমের দেখা না মিললেও সপ্তাহখানেক পর পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে দেখা যায় তাকে।

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি নেতা মীর শওকতের হাত ধরে রাজনীতিতে উত্থান হয় হাজী সেলিমের। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৫ ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাজী সেলিম। কিন্তু সে ইচ্ছাপূরণ না হওয়ায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। মনোনয়নও পেয়ে যান। লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন হাজী সেলিম। এরপর ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়া ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে তার ব্যবসা ও সম্পত্তির পরিমাণ।

২০০১ সালে বিএনপির নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান হাজী সেলিম। বিএনপির ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশে গাঢাকা দেন তিনি। পরের নির্বাচনে আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি হাজী সেলিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার জায়গায় মনোনয়ন পান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ক্ষুব্ধ হাজী সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হাজী সেলিম। ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে প্রার্থিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তিনি। মনোনয়ন পাওয়ার পর আবার একটু একটু করে কথা বলতে শুরু করেন। নির্বাচনে জয়লাভ করে আগের মতোই ক্ষমতার প্রদর্শন ও দখল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি:

উপদেষ্টা পরিষদ: আবদুল হক সবুজ, হাজি মো. সেলিম, কামাল চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফোরকান মিয়া, শেখ রইসুল আলম ময়না, অ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম রোজী, মো. ফজলে রফিক, মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু, মাহবুবুর রহমান আলীজান, মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, ডা. মোশাররফ হোসেন, মীর সমীর, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান মোল্লা, হাজি আফতাব উদ্দিন, হাজি ফয়েজ, মুক্তিযোদ্ধা ফুয়াদ আলম, সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর, ফজলুর রহমান পর্বত, সিরাজুল ইসলাম র‌্যাডো, তোফাজ্জেল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানউল্লা মনি, ইঞ্জিনিয়ার লুৎফর রহমান, হাজি ইসলাম উদ্দিন, এস এম আমিনুল ইসলাম, আবুল কাশেম, শেখ ইসমত জামিল আকন্দ লাভলু ও সেকেন্দার আলী।

সভাপতি: আবু আহমেদ মন্নাফী

সহ-সভাপতি: নুরুল আমিন রুহুল, ডা. দিলীপ রায়, শহীদ সেরনিয়াবাত, হাজি মো. সাহিদ, খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ, মিজবাউর রহমান ভূইয়া রতন, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, সাজেদা বেগম, আওলাদ হোসেন, শরফুদ্দিন আহমেদ সেন্টু ও হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন।

সাধারণ সম্পাদক: মো. হুমায়ুন কবির।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: মোরশেদ হোসেন কামাল, মো. মিরাজ হোসেন ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি।

অন্য সম্পাদকীয় পদের মধ্যে আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জগলুল কবির, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আনিস আহম্মেদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আজহার, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নাঈম নোমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরিফুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাহমিনা সুলতানা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন হেলাল, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম খান পল, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এসকে বাদল, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. নাসির, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়া এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম।

সাংগঠনিক সম্পাদক: গোলাম আশরাফ তালুকদার, মো. আকতার হোসেন ও গোলাম সরোয়ার কবির।

এ ছাড়া সহদপ্তর সম্পাদক আরিফুর রহমান রাসেল, সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মো. হুমায়ুন কবির দায়িত্ব পেয়েছেন।

সদস্য: ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শাহ আলম মুরাদ, আলহাজ মো. আবুল বাশার, সালাউদ্দিন বাদল, এম এম সহিদুল ইসলাম মিলন, আশরাফুল ইসলাম মারুফ, গোলাম রব্বানী বাবলু, সাইফুল ইসলাম, মো. মুজিবুর রহমান, জসিমউদ্দিন খান আজম, গিয়াস উদ্দিন সরকার পলাশ, মামুন রশিদ শুভ্র, ওমর বিন আবদাল আজিজ তামিম, মারুফ আহমেদ মনসুর, আসাদুজ্জামান আসাদ, শফিকুল ইসলাম খান দিলু, ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন, আনিসুর রহমান আনিস, ইলিয়াছ আহমেদ বাবুল, মো. জসিম উদ্দিন, শাহজাহান ভুইয়া মাখন, সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলী, মোহাইমান বয়ান, সাহাবুদ্দিন সাহা, রাশেদুল মাহমুদ রাসেল, রাকিব হাসান সোহেল, অপু বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট সালমা আক্তার কেকা, ড. খন্দকার তানজির মান্নান, এস এম আলিমুজ্জামান আলম, মো. আইউব খান, আমিনুল ইসলাম শামীম, সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী দীপু, লাভলী চৌধুরী, ফাতেমা আক্তার ডলি ও সিরাজুম মনির টিপু।

Leave A Reply

Your email address will not be published.