পুতিন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়ার শহর

283

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুটিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল পূর্ব রাশিয়ার শহর খাবারস্ক। আঞ্চলিক গভর্নরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার মানুষ। খবর ডয়চে ভেলে’র।

রাশিয়ার একেবারে পূবদিকে চীনের সীমান্তঘেঁষা শহর খাবারস্ক। মাত্র পাঁচ লাখ লোকের বাস। সেখানেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের দাবি একটাই, প্রাক্তন আঞ্চলিক গভর্নর সের্গেই ফুরগালকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি অতিদক্ষিণপন্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ রাশিয়া(এলডিপিআর)-র নেতা। পনেরো বছরের পুরনো হত্যার অভিযোগে তাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এখন মস্কোর জেলে বন্দি।

তাঁরই সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ ও সের্গেই-এর সমর্থকরা। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘ফুরগাল আমাদের নেতা’, ‘ফুরগাল হত্যাকারী নন’। কেউ তাঁদের থামাবার চেষ্টা করেনি। বরং ট্রাক ড্রাইভাররা দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়লেও বিরক্ত হননি। তাঁরাও তালে তালে হর্ন বাজিয়ে দাবি সমর্থন করেছেন।

মিছিলে কোনো তথাকথিত নেতা ছিলেন না। সামাজিক মাধ্যমেই মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নামেন। স্বেচ্ছাসেবকরা মাস্ক, খাবার ও জল বিলি করেন। মিছিল চলার সময়ই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। তাতেও কেউ বাড়ি যাননি। রেনকোট পরে, ছাতা নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যান। একসময় গোড়ালি ডোবা জলের মধ্যেও তাঁরা দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান।

এমনিতে রাশিয়ায় এই ধরনের বিক্ষোভ বরদাস্ত করা হয় না। পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভ কড়া হাতে মোকাবিলা করা হয়। কিন্তু এই শহরে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অন্য মাত্রা নিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই শহর এখন মস্কো-বিরোধী বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক শনিবার এখানে বিক্ষোভ হচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা আঞ্চলিক সরকারের অফিসের সামনে যাচ্ছেন। সেই জায়গাটা পুলিশ ঘিরে রাখছে। তখন তাঁরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। রাশিয়ার সরকারি মিডিয়া অবশ্য এই বিক্ষোভের খবর দিচ্ছে না। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে থাকছে বিক্ষোভের খবর ও ছবিতে।

এমনই এক বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলে ডিডাব্লিউ। তাঁর নামও সের্গেই। পরনে টি শার্ট।তাতে লেখা ‘আমি/আমরা সের্গেই ফুরগালের সঙ্গে আছি।’ তিনি বলছিলেন, ”প্রত্যেক শনিবার বিক্ষোভে আসছি। গত ৫০ বছর ধরে এখানে বাস করি। প্রথমবার কোনো রাজনৈতিক নেতার সমর্থনে এই ধরনের বিক্ষোভ দেখছি। লোকে ক্ষুব্ধ, অপমানিত বোধ করছেন। আমরা তাঁকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছি। প্রেসিডেন্ট কী করে তাঁকে এভাবে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারেন?”

গত ৯ জুলাই ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস ফুরগালকে গ্রেফতার করে। তাঁকে মস্কো নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে বরখাস্ত করার নির্দেশে সই করেন পুটিন। সেখানে বলা হয়, ফুরগাল লোকের আস্থা হারিয়েছেন। অভিযোগ করা হয়, ২০০৪ এবং ২০০৫-এ ফুরগাল তাঁর একাধিক বিরোধী ব্যবসায়ীকে হত্যা করিয়েছেন।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, যদি এই অভিযোগে কণামাত্র সত্যতা থাকে, তা হলে এখানেই তাঁর বিচার করা যেত। মস্কো নিয়ে যাওয়ার দরকার ছিল না। অনেকের প্রশ্ন, গত ১৫-১৬ বছর ধরে প্রশাসন কী করছিল?

ফুরগাল ২০১৮ সালে এই অঞ্চলের গভর্নর হয়েছিলেন। তিনি ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, এটা আসলে কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-ভোট। এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ নিজেদের অবহেলিত মনে করছেন। ক্ষমতায় এসে তিনি বেশ কিছু জনমোহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারি বিলাসবহুল নৌকো বিক্রি করে দিয়েছেন। এর ফলে বছরে ছয় লাখ রুবল বেঁচেছে। তিনি সরকারি কর্মীদের পেনশন কমিয়ে ৯০ লাখ রুবল বাঁচিয়েছেন।

তাঁর জায়গায় গভর্নর করা হয়েছে মিখাইল ডিগটিরভকে। তিনিও একই দলের। তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা। আগে দুই বার মস্কোর মেয়র হওয়ার জন্য লড়েছিলেন। তিনি ফুরগালকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। সামাজিক দূরত্বের দোহাই দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গেও দেখা করছেন না।

কিন্তু বিক্ষোভ বাড়ছে। লেনিন স্কোয়ারে এসে বিক্ষোভ যখন শেষ হলো, তখন বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে বললেন, ”আবার আমরা প্রতিবাদ দেখাতে সমবেত হব।” তখন তাঁদের স্লোগান বদলে গিয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘স্বাধীনতা চাই’, ‘আমরা যখন এক, তখন আমরা অপরাজেয়।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.