কেন কামালকে নিয়ে জোট করলেন, কেন সংলাপে গেলেন, বিএনপির নেতাদেরকে খালেদা জিয়া
ঢাকা: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে নির্বাচনী মোর্চা করা, তাকে নিয়ে পথচলা এবং নির্বাচনের আগে এজেন্ডা ঠিক না করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে এই প্রশ্ন তুলেন দলটির চেয়ারপারসন।
ঈদের আজহার রাতে গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেশের রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনাকালে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।
এই আলোচনা ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রসঙ্গ উঠে। এই দুটি জোট দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে পথ চলছে। এদিন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে ছেটে ফেলা না ফেলা নিয়ে স্পষ্ট মত দেন খালেদা জিয়া।
এদিন খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজায় প্রবেশের পর নেতারা পিপিই পরে দোতলায় ড্রইংরুমে বসেন। সেখানেই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।
এ সময়- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের সাজা স্থগিত করে মুক্ত হওয়ার পর প্রথম ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল।
স্থায়ী কমিটির নেতা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির নেতাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতির বাইরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ করা, জামায়াতসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।
আলোচনার একপর্যায়ে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা কেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করতে গেলেন? কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গেলেন? আবার গেছেন, আগে কেন এজেন্ডা ঠিক করলেন না?
আপনারা ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় নেতা বানালেন! কিন্তু তিনি (ড. কামাল) কবে জাতীয় নেতা ছিলেন? তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করেছেন। তিনি তো জাতীয়তাবাদী শক্তির কেউ নন। তার সঙ্গে তো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আদর্শিক নয়।
ড. কামাল তো সব সময় তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলেন। ড. কামাল যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতেন তাহলে তো এ সরকার থাকত না। এ সময় জোট গঠন ও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখা তিন নেতা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খালেদা জিয়ার সামনে হালকা তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ওই তিন নেতার উদ্দেশে অপর এক নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থায়ী কমিটির অর্ধেক নেতা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। ওই তিন নেতার মধ্যে একজন বলে উঠেন, এটা ছিল সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। জবাবে স্থায়ী কমিটির ওই নেতা বলেন, আপনারা আমাদের ফাঁদে ফেলেছেন।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার প্রশ্নে অধিকাংশ নেতা একমত পোষণ করেছেন। প্রসঙ্গটি খালেদা জিয়ার সামনে তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে তিনি বলেন, জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। স্বল্প সময়ের চিন্তা না করে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হবে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। এ দলের কাছে দেশের স্বার্থ ও জনগণ সবার আগে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এমপি, মন্ত্রী অথবা ক্ষমতায় গিয়ে কী হবে?
দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কাউকে খুশি করে গোঁজামিল দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো চিন্তা করাও ঠিক না। শুভেচ্ছা বিনিময়ের শেষ পর্যায় এসে এক নেতা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, আমরা শুনতে পাচ্ছি- নির্বাচনের সময়ও এ নিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির বিভিন্ন লোকজনের কথা হয়েছে।
তা হল- জোট থেকে জামায়াত এবং দলের শীর্ষ পদ থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিলে বিএনপিকে তারা (প্রতিবেশী দেশ) ক্ষমতায় নেবে। এখন ধরলাম আমরা জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেব, এরপর যদি মাইনাস টু মানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দেয়ার কথা বলে তখন কী হবে?
ওই নেতা আরও বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অথবা দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে দল পরিচালনায় আপনার আইডিয়া শেয়ার করুন। আপনি কারাগারে যাওয়ার পর যত সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে প্রতিটি সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষে গেছে।
এখন দেশের মানুষ, সাধারণ নেতাকর্মী, সবাই সন্দেহ করে আমাদের কী সরকার নিয়ন্ত্রণ করে কিনা। খালেদা জিয়া ওই নেতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেও কোনো জবাব না দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শেষ করেন।
ঈদুল আজহার দিন দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।