ইউনাইটেডে আগুনে রোগীর মৃত্যু : চার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত
ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনে আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) এ আদেশ দেন আদালত।
ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান খান ও তানজিব উল আলম। রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির মাহমুদ, নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও শাহিদা সুলতানা শিলা।
গত ১৫ জুলাই এক আদেশে ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেন আদালত।
গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এসি বিস্ফোরণের ফলে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতদের মধ্যে ছিলেন চারজন পুরুষ এবং একজন নারী। এরা হলেন মো. মাহবুব (৫৭), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভেরুন এ্যান্থনী পল (৭৪), খাদেজা বেগম (৭০) এবং রিয়াজুল আলম লিটন (৪৫)।
ওই ঘটনায় ৩০ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ব্যারিস্টার শাহিদা সুলতানা শিলা। পরে ১ জুন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকেও পৃথক একটি রিট আবেদন করা হয়।
এতে গত ২ জুন হাই কোর্ট এক আদেশে আগুনের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্যরা গত ১৪ জুন প্রতিবেদন দাখিল করে। ওইসব তদন্ত প্রতিবেদনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। রাজউকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমতি ছাড়াই করোনা আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদন দেখার পর গত ২৯ জুন হাইকোর্ট পৃথক আরেক আদেশে উভয়পক্ষকে সমঝোতা করতে বলেন। এছাড়া অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব পক্ষকে বসার জন্য চিঠি দেয়। এরপর সকলে এক বৈঠকে বসে। সেখানে মৃত মনির হোসেনের পরিবারের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। অপর মৃত চারজনের পরিবার এতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় বিষয়টি আদালতকে জানানো হলে বাকি চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ করে দিতে নির্দেশ দেন আদালত।