মার্কিন নাগরিক হবার স্বপ্ন ঝুলে রয়েছে ৮ লাখ অভিবাসীর

235

যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশি আসমা আকতার সহ বিভিন্ন দেশের পৌণে ৮ লক্ষাধিক গ্রীনকার্ডধারীর সিটিজেন হবার স্বপ্ন ঝুলে রয়েছে করোনা মহামারি এবং ইউএসসিআইএস’র বাজেট সংকটের কারণে। এর সিংহভাগেরই প্রত্যাশা ছিল যে, নভেম্বরের নির্বাচনে তারা অভিবাসন-বান্ধব প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এর মধ্যে ১০ হাজারের অধিক বাংলাদেশিও রয়েছেন। 

ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস তথা ইউএসসিআইএস সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে ১৮ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত অফিস বন্ধ ছিল। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে সিটিজেন হবার শপথ গ্রহণের সকল কর্মসূচি বাতিল হয়ে গেছে। এ তালিকায় ছিল এক লাখ ২৬ হাজার অভিবাসী। এখন অফিস খোলা থাকলেও কাজকর্ম তেমন হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অনান্য স্বাস্থ্যবিধির কারণে। একইভাবে সিটিজেনশিপের শপথ অনুষ্ঠিত হচ্ছে অফিসের বাইরে গাড়ী গ্যারেজ অথবা খোলা মাঠে ১২ থেকে ১৫ জনের। এর আগে শতশত মানুষ বড় অডিটরিয়ামে জড়ো হয়ে উৎসবের আমেজে শপথ নিয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও ৬ লাখ ৪৯ হাজার ২১ গ্রীনকার্ডধারীর সিটিজেন আবেদন প্রসেসিংয়ের জ্যামে পড়েছে। এমনি অবস্থার সাথে যুক্ত হতে চলেছে এই সংস্থাটির বাজেট ঘাটতি। ১.২৬ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে কংগ্রেসের কাছে বিশেষ মঞ্জুরির আবেদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৬ মে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমক্র্যাটদের ভোটে ‘হিরোজ এ্যাক্ট-২০২০’ নামে করোনা রিলিফ হিসেবে মোট ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাশ হলেও রিপাবলিকান শাসিত সিনেট সেটিকে গ্রহণ করেনি। 

অর্থাৎ বাজেট সংকটের কারণে ইউএসসিআইএস’র ১৫ হাজার কর্মচারিকে ২০ জুলাই ছুটিতে যাবার নোটিশ দেয়া হচ্ছে। ঘাটতিকৃত অর্থ পেলেই তারা পুনরায় অফিসে ফিরবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। অর্থাৎ ১৮৭০০ কর্মচারির মধ্যে ১৫ হাজারই লে-অফে গেলে মাত্র ৩৭০০ কর্মচারি দিয়ে কীভাবে সিটিজেনশিপ প্রসেসিংসহ অভিবাসন দফতরের সকল কাজকর্ম পরিচালিত হবে-তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এভাবেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিবাসন সংকোচনের গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

ইউএসসিআইএস কর্মকর্তারা এ সংবাদদাতাকে জানান, করোনার কারণে ১৮ মার্চ অফিস বন্ধের আগ পর্যন্ত এক লাখ ২৬ হাজার গ্রীনকার্ডধারীর সিটিজেনশিপের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। সে সময়ে সিটিজেনশিপের ৬ লাখ ৪৯ হাজার ২১টি দরখাস্ত ফাইলে জমা হয়। এই সংকটের সময় শুধুমাত্র জরুরী ভিসার কার্যক্রম চলেছে অনলাইনে। সে সময়ে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সিটিজেনশিপের শপথ অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয় কংগ্রেসের কাছে। সেটি পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সীমিত আকারে ৪ জুন অফিস খোলা হলেও এ যাবত অর্থাৎ ২৮ দিনে সিটিজেনশিপের শপথ নিয়েছেন মাত্র ২০০০ জন। অথচ করোনার আগে প্রতিমাসে গড়ে ৬০ হাজার জনের শপথ হয়েছে।

এদিকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান যে, কংগ্রেস যদি বিশেষ বরাদ্দ না দেয় তাহলে অভিবাসনের বিভিন্ন সার্ভিসের ফি বৃদ্ধি করতে হবে। সে শংকায় গত নভেম্বরে ইউএসসিআইএস সিটিজেনশিপ হবার ফি ৮৩% বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালেও সিটিজেনশিপ ফি বাড়ানো হয়েছে। খরচ পুষিয়ে নিতে গ্রীনকার্ড ফি, ওয়ার্ক পারমিট ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি’ও বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় আবেদনের সংখ্যাও কমেছে। অর্থাৎ ফি বাড়িয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। জানা গেছে, কংগ্রেস থেকে ১.২৬ বিলিয়ন ডলারের যে বিশেষ অনুদান চাওয়া হয়েছে তা চলতি অর্থ বছরের বাজেটের মাত্র ২৫%।   

Leave A Reply

Your email address will not be published.