ব্যালেন্স সংকটে পড়তে পারেন কোটি মোবাইল গ্রাহক

242

ঢাকা: করোনার প্রভাবে কয়েকদিনের মধ্যে দেশে প্রায় ১ কোটি গ্রাহক ব্যালেন্স বা রিচার্জ সংকটে পড়তে পারেন বলে আশংকা করছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।

অপারেটরগুলো বলছে, করোনার প্রভাবে দেশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৬৫ শতাংশ রিটেইল এজেন্ট পয়েন্ট বন্ধ রয়েছে। মানুষ ঘরে অবস্থানের কারণে আগের করা রিচার্জও ফুরিয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অন্যান্য মাধ্যমে যে অংশটি রিচার্জ করে আসছে তাদের অনেকের ওয়ালেটেও ব্যালেন্স ফুরিয়ে আসছে রিফিল না করতে পারার কারণে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু এসব কারণ নয় দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকার কারণেও মোবাইলে রিচার্জ করে কথা বলার সামর্থ্যও হারাতে পারেন একটি অংশ।

এদিকে ভয়েস কলে কথা বলা ও রিচার্জ কমে যাওয়া মিলে অপারেটরগুলোর আয়েও লেগেছে ধাক্কা।

রবির চিফ করপােরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, করোনার প্রভাবে ভয়েস কলের পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় সার্বিক রাজস্ব ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ভয়েস কল কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো স্বল্প আয়ের মানুষের আয় কমে যাওয়া, ইন্টারনেটভিত্তিক ওটিটি কল বৃদ্ধি যাওয়া এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রিচার্জ পয়েন্টগুলো বন্ধ থাকা। বিশেষত লকডাউন পরিস্থিতির কারণে রিচার্জ পয়েন্ট বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের পক্ষে রিচার্জ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

‘গত এক মাসে রবির দৈনিক গড়ে রাজস্ব কমেছে ৪ কোটি টাকা, আর সার্বিকভাবে রাজস্ব কমেছে ১২০ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রবির ব্যবসার সংকট ভবিষ্যতে আরও বাড়বে’ বলছিলেন তিনি।

২০১৯ সালে অপারেটরটি নিট মুনাফা করেছিল ১৭ কোটি টাকা। সেখানে এভাবে আয় হারানো অপারেটরটিকে মুনাফা ধরে রাখার ভাবনা ছেড়ে বড় লোকসান ঠেকানোর চ্যালঞ্জে ফেলবে বলে মনে করেন রবির এই শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মুহাম্মদ হাসান বলেন, বিগত কয়েক সপ্তাহে কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন খাতের ব্যবসাসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি টেলিযোগাযোগখাতও।

‘দেশজুড়ে কমিউনিটিভিত্তিক লকডাউনের কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিচার্জ পয়েন্ট পরিপূর্ণভাবে চালু রাখতে পারছে না’ বলছিলেন তিনি।

অপারেটরটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলছেন, ৬০-৬৫ শতাংশের মতো রেইটেইলার পয়েন্ট বন্ধ থাকায় রিচার্জের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এখনও দেশের বেশিরভাগ মোবাইল ফোন গ্রাহক রিটেইলার পয়েন্টের মাধ্যমে রিচার্জ করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক ঘরবন্দী ও লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেক গ্রাহকই ব্যালেন্স ফুরিয়ে যাওয়ার সংকটে পড়বেন।

‘এছাড়া যেসব গ্রাহক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অন্যান্য মাধ্যমে রিফিল করে থাকেন তারাও একরকম ব্যালেন্স সংকটে আছেন। আর দেশে ডিজিটালি মোবাইল ব্যাল্যান্স রিফিল করা গ্রাহকের তুলনামূলক এখনও কম’ বলছিলেন তিনি।

বাংলালিংকের হেড অফ কর্পোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা বলেন, ২০ শতাংশের গ্রাহক রিচার্জ সংকটে পরবেন। করোনায় ঘরবন্দী ও লকডাউনে উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রভাবে সামগ্রিকভাবেই পড়ছে।

‘তবে তাদের গ্রাহককে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন’ বলছিলেন তিনি।

মোবাইল অপারেটরগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ সেবা জরুরি সেবা ঘোষণা করলেও রিটেইলারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সেভাবে কার্যক্রম শুরু করেনি। গ্রাহকরাও হাতের কাছে রিচার্জ পয়েন্ট না পেলে আশেপাশের অন্য পয়েন্ট খুঁজে রিফিলের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেটেইলাররা গ্রাহককে ফিরিয়ে দিচ্ছে নিজেদের পর্যাপ্ত ব্যালেন্স সংকটের কারণে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.