কেমন হবে মে মাসে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি

465

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে ৪৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৯ জন। অপর দিকে মৃত্যু বরণ করেছেন ২৩১ জন। খবর বিবিসি বাংলার।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে বলেন, এই সময়ে বিশ্বের অন্য দেশে যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল তার তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণের সংখ্যা কম।

তিনি বলেন, প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ইতালিতে ৪৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার। মারা গিয়েছিল প্রায় ১১ হাজার। স্পেনে একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ এবং মারা গিয়েছিল ১০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয় এক লাখ ২০ হাজার এবং মারা যায় ২৪ হাজার। সে তুলনায় বাংলাদেশের প্রথম ৪৫ দিনের অবস্থান ভালো।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেশ কয়েক দিন ধরেই তিনশ বা চারশোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি এপ্রিল মাস ক্রিটিক্যাল ছিল না?

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে যে ধারণাটি পাওয়া যায় তা হলো এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ার কথা ছিল। একটা পর্যায়ে এসে এ সংখ্যা প্রতিদিন এক হাজার কিংবা দুই হাজারও হতে পারতো।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই সংখ্যাটি কেন বাড়ছে না সে বিষয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলছেন, বাংলাদেশে টেস্ট করানোর মেকানিজমটা এতো দিনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল এবং সেটা পুরোপুরি সচল হওয়া দরকার ছিল। এই পরীক্ষার মেকানিজম কতটা সচল সেটা একটা প্রশ্ন।

তার মতে, যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে বা যারা লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন তারা যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত না হয়ে থাকেন তাহলে বলা হচ্ছে যে তার করোনা নেই। কিন্তু তাহলে তার মধ্যে লক্ষণগুলো অন্য কী কারণে দেখা দিয়েছে সে বিষয়টি আর পরিষ্কার করা হচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় নেগেটিভ আসার অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে নমুনা সংগ্রহ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে অনেকের মধ্যেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে যাদের মধ্যে কোন উপসর্গ নেই। একই ধরণের ধারা দেখা যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মে মাসের প্রথম দিকে পিক ( সর্বোচ্চ সংক্রমণের সংখ্যা) পাওয়া যাবে না। এটা আরো প্রলম্বিত হবে।

তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন পুরোপুরি সচল হবে এবং পরিবহন ব্যবস্থা যখন চালু হবে, তখন বোঝা যাবে যে আসলে সংক্রমণ কতটুকু বাড়ছে।

তখন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে আসবে।

সর্বোচ্চ সংক্রমণের সংখ্যা (পিক) মে মাসে হবে নাকি সেটি জুন মাস নাগাদ হবে? বিশেষজ্ঞদের কাছে এটি এক বড় প্রশ্ন। পিক আসলেও সেটা কতটা উচ্চতায় উঠবে? সামনের দিনগুলোতে এগুলো বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এজন্যই তাদের দৃষ্টিতে মে মাসটি ক্রিটিক্যাল হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফুল্লাহ মুনশি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশে কোন প্রজেকশন করা হয়নি।

তিনি জানান, একটা দেশের মধ্যে ডেমোগ্রাফি, স্বাস্থ্য সুবিধা এবং এপিডেমিওলজিক্যাল তথ্যের ভিত্তিতে একটা কার্ভ তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে জানা যায় যে, রোগের পিকটা কখন হবে।

তার মতে, বাংলাদেশে এটা করা হলে, এপ্রিল, মে নাকি কোন সময় পিকটা হবে তার ধারণা পাওয়া যেতো। কিন্তু আমাদের সেটা করা হয়নি।

সাইফুল্লাহ মুনশি জানান, মে মাসকে ক্রিটিক্যাল ধরতে হবে কারণ বর্তমানে সংক্রমণের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে হারেই যদি বাড়তে থাকে তাহলে মনে হচ্ছে যে, মে মাসে গিয়ে হয়তো একটা পিকে পৌঁছে যাবে।

কারণ এখন প্রতিদিনই চারশ-পাঁচশ জন আক্রান্ত হচ্ছে। এটা আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে কোন মডেল ধরে কাজ করা হচ্ছে কি না?

এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই।

তবে তিনি বলেন, এপ্রিল মাসটি ক্রিটিক্যাল অবশ্যই ছিল কারণ ঠিক এক মাসে আগের তুলনায় বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.