প্রবাসীরা এখন ভিলেন

331

ঢাকা: করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবন। ওলোটপালোট হয়ে গেছে সমাজের সবকিছু। বিয়ের পছন্দের তালিকায়, সমাজে এবং পরিবারে প্রবাসীরা ছিলেন সবচেয়ে আদরনীয়; তারা এখন হয়ে গেছেন ভিলেন! বিয়ের বাজারে ইউরোপের দেশগুলো, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানে থাকা পাত্রদের কদর ছিল সবচেয়ে বেশি।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে ইউরোপের দেশে এবং আমেরিকায় থাকা ছেলেরা ছিলেন পছন্দের পাত্রের তালিকার শীর্ষে। এখন সেখানে নেমে গেছে ধ্বস। শুধু তাই নয়, করোনার কারণে ইউরোপ বিশেষ করে ইতালি ফেরতদের বাঁকা চোখে দেখা হয়। বিদেশ ফেরতের পর অনেকেই নিজ বাসায় অবহেলিতই শুধু নন; আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলেও কটু কথা শুনতে হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বাসিন্দা ইতালি ফেরত আলমগীর হোসেন নিজের করুণ কাহিনী শোনালেন। বললেন, ইতালিতে থাকার কারণে বিয়ের বাজারে আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের চেয়েও বেশি পছন্দের ছিলাম। বিয়েও করেছি। সুখে ছিলাম। করোনার কারণে দেশে ফেরার পর নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। পরিবারে টাকা পয়সা দেয়ার কারণে আমিই ছিলাম সবচেয়ে আদরের। অথচ দেশে আসায় এখন ভাইবোন অসন্তুষ্ট। আত্মীয়-স্বজন এমনভাবে কথাবার্তা বলেন যেন তাদের বাড়ি বেড়াতে না যাই। অথচ তাদের কাছে আমি ছিলাম সবচেয়ে দামি মানুষ।

দীর্ঘ ১০ বছর ইতালিতে থেকে ৪ বছর আগে ঢাকার বনশ্রীতে বাড়ি করেছেন, নাম প্রকাশে এমন একজন জানান, ইতালিতে যেতে পারা মানেই জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া। অথচ এখন তাদের কেউ পছন্দ করছেন না। রংপুরের পীরগাছা মহিলা কলেজের বাইলজির অধ্যাপক আমিনউল্লাহ জানালেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর রংপুরে বিদেশফেরতদের জীবনের শত্রু মনে করা হয়। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের অনেকেই ঘর থেকে বের হন না। কেউ বের হলে তাকে গ্রামবাসী ধরে পুলিশে দেয়।
তিনি বলেন, মানুষ মনে করছে প্রবাসীরাই করোনাভাইরাস দেশে এনেছেন। বিদেশফেরত প্রবাসীরা ঘর থেকে বের হয় কিনা তা তদারকি করতে এ জন্য গ্রামে গ্রামে বিগ্রেট গঠন করা হয়েছে। হাটবাজারে বিদেশ ফেরতদের দেখলেই হৈ-চৈ পড়ে যাচ্ছে। মানুষ তাকে ঘরে বন্দি থাকতে বাধ্য করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন জানালেন, গত ১২ মার্চ হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা ইতালি ফেরত যাত্রীরা বিক্ষোভ করছে। তাদের একজন তার আত্মীয়। ইতালি প্রবাসীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনার হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর গ্রামে ফিরে যান। কিন্তু তাকে গ্রামবাসীদের কেউ স্বাগত জানায়নি; পরিবারের সদস্যরাও অন্যবারের মতো খুশি হননি। বর্তমানে তিনি কার্যত একঘরে অবস্থায় রয়েছেন।

রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁর স্থানীয় সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবের পর যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা লজ্জার মুখে পড়ছেন, পরিবারের সদস্যদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনরা মেনে নিলেও গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামের মানুষ করোনার জন্য তাকে দোষারোপ করে ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য করছেন। নিকটাত্মীয়রা বাঁকা চোখে দেখছেন।

স্থানীয় সাংবাদিকরা আরো জানান, এখন যারা ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন তাদের ব্যাপারেও গ্রামের মানুষ সচেতন হচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন করে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাশ ফেলে পাহারা দেয়া হচ্ছে। বিদেশ ফেরত ও ঢাকা ফেরতদের ঘরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ কথা না শুনলে স্থানীয় থানাকে জানানো হচ্ছে, এবং ওই ব্যাক্তিকে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

Leave A Reply

Your email address will not be published.