জানা গেল টিউশন ছাড়াও কলকাতায় যে ব্যবসা করতেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

329

ঢাকা: গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদকে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার মধ্যরাত ১২টা ০১ মিনিটে কার্যকর হয় তার ফাঁসি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

জানা গেছে, কলকাতায় সুদের ব্যবসা করতেন মাজেদ। এছাড়া টিউশন করিয়ে সংসার চালাতেন। প্রথমে কলকাতার তালতলার ভাড়া বাড়িতে একা থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।

বেশ কিছুদিন ধরেই ৭২ বছর বয়সী মাজেদের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন মাজেদ। এরপর আর ফেরেননি তিনি। ওইদিন সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আব্দুল মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পায় কলকাতা পুলিশ।

এতে দেখা যায়, ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ভাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন আবদুল মাজেদ। সেখানে আট মিনিটের মতো কাটানোর পর ঠিক ১০টা ১২ মিনিটে রিপন স্ট্রিটের দিকে যেতে থাকেন তিনি। আর তখন থেকেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে ওই দুই ব্যক্তি।

স্বাস্থ্যবান ওই দু’জনের গালে কালো চাপ দাড়ি। ব্যাকব্রাশ করা চুল। একজনের পরনে ডেনিম জিন্স ও নীল ফুল হাতা টি-শার্ট। অন্যজনের গায়ে বড় চেক শার্ট। দু’জনের হাতেই মোবাইল ফোন।

পরে তাদের সঙ্গে আরও দু’জন যোগ দেন। মোট চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিলেন মাজেদের। সিসিটিভি’র ফুটেজ থেকে সবার ছবিই পাওয়া গেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফ-এর কর্মকর্তারা পিছু নেওয়া ওই যুবকদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিল। কারণ মাজেদ ছোটখাট সুদের ব্যবসা করতেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছিলেন মাজেদ। ওইদিন পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এজন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ধরে এসে রাস্তা পার হয়ে বাসের জন্য এজেসি বোস রোডে আসেন।

এরপরের ফুটেজে দেখা যায়, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছে। তবে ক্যামেরা উন্নত না হওয়ায় কী কথা হয়েছিল, তা শোনার উপায় নেই। ঠিক তখনই মৌলালির দিক থেকে আসা সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের একটি বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে। ওই চারজনও ওই বাসে ওঠেন। এরপর আর কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

কলকাতা পুলিশ তদন্তে নেমে এজেসি বোস রোডের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে। তবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি মাজেদকে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ। যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, তাকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গুয়াহাটি। পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ। মনে করা হচ্ছে, ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালে তিনি একবার মোবাইলফোনটি অন করেছিলেন।

কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুজিত ভৌমিকের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘ঘাতকের ডেরা’র দ্বিতীয় পর্ব থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা ডেস্ক প্রতিবেদন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.