যারা গ্রামের বাড়িতে গেছেন তাদের কারণেই সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ছে
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধকল্পে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার ঘোষিত ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগে ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছিলাম (৪ এপ্রিল পর্যন্ত) এবং এটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছুটি বাড়ানো হতে পারে, কেননা করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে ছুটি ঘোষণার পর পরই অনেকেই তাঁদের গ্রামের বাড়িতে চলে যান। কাজেই এই প্রাণঘাতি ভাইরাসের কোন সংক্রমণ যেন না ঘটে সেজন্য তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সময়টা গণনা করে ১৪ দিন করার জন্য ছুটি ৯ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে কিছু সেক্টরে ছাড় দিতে হবে।’
ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা বাড়ানোর সাথে সাথে আমাদের সীমিত আকারে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার জন্য আমরা চিন্তা-ভাবনা করে বলব, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা সেটা ছাড় দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যোগাযোগের (পরিবহন) শ্রমিক শ্রেণি যারা আছেন তারাও যাতে কষ্ট না পায় তাদের তালিকা আমি ইতোমধ্যে করতে বলেছি। তাদের যেভাবে সাহায্য করার দরকার, আমরা সেই সাহায্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা এভাবে থাকবে যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানুষের আওতার মধ্যে থাকে। সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে অযথা দাম বাড়িয়ে মুনাফা নেয়া এটা আসলে অমানবিক হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখবেন।’
জনসমাগম এড়াতে আসন্ন পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের বাংলা নববর্ষের উৎসবে এ বছর যাতে জনসমাগম হয় তেমন কিছু করা উচিত হবে না। অবশ্য ডিজিটাল ব্যবস্থায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে, জনসমাগম করে এই অনুষ্ঠান সারা বাংলাদেশে বন্ধ রাখতে হবে।’
এর আগে গত ২৩ মার্চ করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে সরকার সারাদেশে জরুরী সেবা ছাড়া সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
ছুটির সময় কোন বিশেষ প্রয়োজন যেমন জরুরী খাদ্য, মেডিকেল সামগ্রী,ওষুধের প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঘরে থাকতে বলা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবিলায় দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাটা জরুরি। আমাদের দেশটা ছোট কিন্তু জনসংখ্যা ব্যাপক। এরপরও আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সেজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে রয়েছে।
সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কেননা নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা রয়ে গেছে। আমরা বিশ্ব থেকে দূরে নই। আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার। আমরা আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অনেক আগে থেকেই কাজ করেছি। ভবিষ্যতে যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।
করোনা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কোনো লুকোচুরি করার সুযোগ নেই। লুকোচুরি করলে নিজের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হবে। জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কেননা নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা রয়ে গেছে। আমরা বিশ্ব থেকে দূরে নই। আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার। আমরা আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অনেক আগে থেকেই কাজ করেছি। ভবিষ্যতে যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে বলেন, সাহায্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘কোনো রকম দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুঃসময়ে কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়ব না। বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। কৃষক, চা শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছে না। তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। সেখানে ১০ টাকা কেজি চালসহ নানা সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের কাছে সাহায্য ও খাদ্যদ্রব্য পাঠাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাইকে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড অনুযায়ী তালিকা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবাই যেন সাহায্য পায়। কেউ যেন বাদ না পড়ে।’
সবার পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহারের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিপিই ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য।’
তিনি বলেন, যাদের প্রয়োজন নাই তাদের পিপিই ব্যবহারের প্রয়োজন নাই। পিপিই সকলের ব্যবহারের জন্য নয়। এটি ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য।
পিপিই ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সকলে পিপিই ব্যবহার করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা যেন ব্যাহত না হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্যও প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সে সচিবালয় প্রান্ত থেকে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দও সচিবালয় প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এবং পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া অন্যান্যের মধ্যে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে সকল জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করেন- করোনার সঙ্গে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া যুক্ত হলে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আর কয়েকদিনের মধ্যেই মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু দেখা দিতে পারে, কাজেই সেটা যেন না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি জনগণকে নিজ বাড়ি এবং তার চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পানি জমে থাকা রোধ করে মশার বংশ বিস্তার রোধ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সকলকে মশারি খাটিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। সূত্র: বাসস