দাড়ি রাখা, নামাজ পড়াদের আর ‘বিএনপি-জামায়াত’ আখ্যা নয় : প্রধানমন্ত্রী

240

ঢাকা: দাড়ি রাখেন, নামাজ পড়েন প্রশাসনের এমন কর্মকর্তাদের বিএনপি-জামায়াত অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত না করতে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একশ্রেণির কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে এসব প্রচারণা চালান, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নামাজ পড়া আর দাড়ি রাখা লোক আমি পছন্দ করি।’ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বিদায় উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হককেও বিদায় জানানো হয়। এ দুই সচিবের বিদায় উপলক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী আলোকিত বাংলাদেশকে এসব কথা জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে বিদায় জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নিয়োগের সময় একদল কর্মকর্তা (নিয়োগের) বিরোধিতা করেছিলেন। তারা তাকে (মোহাম্মদ শফিউল আলম) জামায়াত অনুসারি কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে অভিযোগ করেছিলেন। শফিউল আলমকে জামায়াত প্রমাণ করতে বলা হলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তিনি (মোহাম্মদ শফিউল আলম) নিয়মিত নামাজ পড়েন, তার দাড়ি আছে। পরে প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মোহাম্মদ শফিউল আলমের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একটি পরিবার। মহান স্বাধীনতা যু’দ্ধের সময় তার আপন বড় ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন শহীদের ভাইকে আমার সামনে জামায়াত হিসেবে উপস্থাপন করা হলো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোহাম্মদ শফিউল আলম একজন মেধাবী, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকসহ গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের সার-সংক্ষেপ দিনেরটা দিনেই পেয়েছি। এক দিনের কাজ তিনি আরেক দিনের জন্য কখনও ফেলে রাখতেন না। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে তিনি সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার উদাহরণ রেখে গেছেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর (এপিএ) তারই ব্রেন চাইল্ড। এ রকম ভালো ভালো কার্যক্রমের উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম। তখন কোনো রাজধানৈতিক দলের অনুসারি বিবেচনায় না এনে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে গেছি। ফলে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য আদর্শের কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পরে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আমাদের সময়ে পদোন্নতি দেওয়া কর্মকর্তাদের আর কোনো পদোন্নতি দেয়নি। এ কারণে পদোন্নতি পাওয়া বিএনপি-জামায়াতের কর্মকর্তারাও বঞ্চিত হয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তার নিয়োগ বা পদোন্নতি ঠেকাতে প্রথমেই বলেন ওই কর্মকর্তা বিএনপি। আরও পরে বলেন সে তো জামায়াত। একজন কর্মকর্তার রাজনৈতিক বিশ্বাস যে কোনো দলের প্রতি থাকতেই পারে, তা দোষের নয়। সবাই একই আদর্শে বিশ্বাসী হবেন, এটা তো কাম্য হতে পারে না।’ প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অমুক কর্মকর্তা বিএনপি, অমুক জামায়াত বলে আবার কাউকে আখ্যায়িত করবেন না।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.