‘জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা’

289

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভাঙণের কারণেই উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে। মিঠা পানির অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ধান চাষ কমে যাচ্ছে। আবার অনেক কৃষক ধানের বদলে চিংড়ি অথবা সামুদ্রিক মাছ চাষ করছেন। তবে বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়নের নিশ্চিত করে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর।

আজ বুধবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর কৃষিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির উপরিভাগে চাষযোগ্য ফসলের জন্য পানি সংরক্ষণের সেচ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অভিযোজন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইবি’র প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক সদস্য (এনআরএম) ড. প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবি’র সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআই এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রকৌশলী খোকন কুমার সরকার। 

এছাড়া সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএআরআই এর সাবেক পরিচালক (গবেষণা) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এনএটিপি প্রকল্পের কনসালটেন্ট ড. প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আইইবি কৃষিকৌশল বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ (শফিক) এর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম মিয়া।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন মানবসভ্যতার প্রতি বিশ্বের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাংলাদেশ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো। সেসব এলকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লোনা পানি বেড়ে যাচ্ছে। সেসব এলাকায় মিঠা পানি কমে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হচ্ছে কৃষিতে পরিবর্তন আনতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই ঘটনা হচ্ছে। তবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে এখন লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন প্রজাতির ধান চাষ করা হচ্ছে। অনেকে ধান ছেড়ে চিংড়ি চাষ করছেন। কোথাও বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হচ্ছে। তারা পরিবেশের সাথে মানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বক্তরা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশে কৃষির জন্য দূর্যোগপ্রবণ এলাকা তথা হাওর ও উপকূলীয় এলাকার চাষযোগ্য জমিকে উৎপাদন উপযোগী করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সে লক্ষ্যে সরকার লবণাক্ত এলাকার উপযোগী লবণ ও খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠাসমূকে গবেষণার জন্য যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। লবণাক্ত পানি চাষের অনুপযোগী হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় সীমিত আকারে প্রাপ্ত ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে আধুনিক কলাকৌশলের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি প্রকৌশলীরা বেশকিছু পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।

বক্তারা বলেন, এসডিজি-২ এবং এসডিজি-৬ এর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই করা। সেই সাথে পরিমিত পরিমাণ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা। উপকূলীয় এলাকায় এই ধরনের গবেষণা সেসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার পানি ও গৃহস্থালীসহ অন্যান্য কাজে সুপেয় পানির যে সংকট রয়েছে তা অনেকাংশই কমিয়ে আনবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.