প্রোটিয়াদের বিধ্বস্ত করে যা বললেন সরফরাজ

278

স্পোর্টস ডেস্ক: চাপের মুখে পাকিস্তান সবসময় ভালো খেলে। পেসার ওয়াহাব রিয়াজের এই উক্তি সত্যি হলো রোববার। এদিন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৮৯ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। মরা-বাঁচার এ ম্যাচ জিতে পাকিস্তান সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছে।

লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত এ খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৯ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।

পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ধারাবাহিক পারফর্ম করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সরফরাজ। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি। ‘ফিল্ডিংয়ে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা অনেক ক্যাচ ছেড়েছি।’ শেষ চারে যেতে হলে বাকি তিন ম্যাচে জিততে হবে পাকিস্তানকে। আপাতত সেই দিকে চোখ পাকিস্তান অধিনায়কের, ‘বাকি তিন ম্যাচ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এই ম্যাচে শোয়েব মালিকের বদলে দলে জায়গা পান তরুণ হারিস সোহেল, তিনি ৪৭ বলে ৭৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তার এ ইনিংসের ওপর ভর করেই পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩০০ ছাড়ায়।

ম্যাচশেষে হারিসের কৃতিত্ব দিতে ভুল করেননি পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। ‘পুরোটাই ছিল দলগত পারফরম্যান্স। আমি মনে করি, আমাদের দলগত চিন্তা তাকে অনুমতি দেয়নি আগের ম্যাচগুলো খেলতে। কিন্তু সে (হারিস) সুযোগ পেয়েই ভালো করেছে। মাঝেমধ্যে সুযোগ দেয়া ভালো কিছু নিয়ে আসে। হারিস যেভাবে ব্যাট করেছে, মনে হচ্ছিল সে রানের জন্য ক্ষুধার্ত। সে ছিল ভিন্ন। সে বাটলারের মতো ব্যাট করেছে।’ সরফরাজ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় এনে দেয়ার জন্য প্রশংসা করেছেন বোলারদের, ‘দ্রুত উইকেট নেয়ার জন্য আমিরকে ক্রেডিট দিতে হবে। মিডল ওভারে শাদাব উইকেট নিয়েছে। এবং ডেথ ওভারে ওয়াহাব উইকেট পেয়েছে।’

বিশ্বকাপের প্রথমে সুযোগ না পাওয়া পাকিস্তানের দুই বাঁ-হাতি পেসার প্রতি ম্যাচেই দারুণ প্রতিদান দিচ্ছেন। প্রতি ম্যাচেই আমির প্রথম স্পেলে উইকেট তুলে নিচ্ছেন। ডেথ ওভারে আমির ও ওয়াহাব হয়ে উঠছেন ভয়ঙ্কর।

এদিনও ওয়াহাবের ৯০ মাইল ছোঁয়া গতিতে রিভার্স সুইং দক্ষিণ আফ্রিকার টেল-এন্ডারদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল। ফিল্ডাররা ক্যাচ মিসের মহড়া না দিলে ওয়াহাবের উইকেট তিনের জায়গা পাঁচ থাকত।

মাঝের ওভারগুলোতে শাদাব খান ৩ উইকেট তুলে নিয়ে মিডলঅর্ডারে ধস নামিয়েছেন। আমির নিয়েছেন আমলা ও ডু প্লেসিসের উইকেট দুটি। শেষ দিকে ফেলুকওয়ায়োর অপরাজিত ৪৬ রানে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।

পাকিস্তানের বড় সংগ্রহের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার। মিডলঅর্ডারে ৮০ বলে ৬৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে দলকে কক্ষপথে রাখেন বাবর আজম। শেষ দিকে ঝড় তোলেন হারিস। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে শেষ ১০ ওভারে ৯১ রান তোলেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা।

আগের পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতে জেতা পাকিস্তানকে কাল জমাট সূচনা এনে দিয়েছিলেন ফখর জামান ও ইমাম-উল হক। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দুজন গড়েন ৮১ রানের উদ্বোধনী জুটি।

দুজনই ফেরেন ৪৪ রান করে। পেসাররা সুবিধা করতে না পারায় ১৫তম ওভারে স্পিনার ইমরান তাহিরকে আক্রমণে আনেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ফখরকে ফিরিয়ে তাহিরই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন।

পরে ইমামও ফেরেন তাহিরকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। অ্যালান ডোনাল্ডকে (৩৮) পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডটি (৩৯) নিজের করে নিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এ লেগস্পিনার।

মোহাম্মদ হাফিজ ৩৩ বলে ২০ রান করে ফেরার পর পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন বাবর ও হারিস। ৮১ রানের জুটি গড়েন তারা। ফিফটি করে বাবরের বিদায়ের পর ইমাদ ওয়াসিমের (২৩) সঙ্গে ৭১ রানের আরেকটি ঝড়ো জুটিতে দলকে ৩০০ পার করান হারিস।

শেষ ওভারে আউট হওয়া হারিসের ৮৯ রানের ইনিংসটি সাজানো নয়টি চার ও তিনটি ছক্কায়। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে লুঙ্গি এনগিডি ৬৪ রানে নেন ৩ উইকেট। আর তাহির ৪১ রানে নেন ২ উইকেট। প্রোটিয়া পেস আক্রমণের নেতা কাগিসো রাবাদা পাননি উইকেটের দেখা। উল্টো ১০ ওভারে গুনেছেন ৬৫ রান।

রবিবাসরীয় এই জয়ের সুবাদে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে রইল। আর প্রোটিয়াদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.