ব্যর্থতা স্বীকার করে যা বললেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা
ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে যে ধরণের আন্দোলন গড়ে উঠার কথা ছিল তা গড়ে তুলতে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করলেন বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যর উদ্যোগে ইফতার ও আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে নেতারা এ ব্যর্থতা স্বীকার করেন।
সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে যারা সরকারে বসে আছেন, তারা কেউ বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তারা বাংলাদেশের সংবিধানকে কেটে তছনছ করে দিয়েছে। মানুষের সমস্ত মৌলিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সংগ্রামী নেতা যিনি বার বার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কারাবরণ করেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যাকে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের মাতা বলে অভিষিক্ত করেছেন, সেই নেত্রীকে তারা দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। এর একটি মাত্র কারণ, তারা জানে খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে, মুক্ত থাকলে তাদের সব ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যাবে। তবে, হতাশার কিছু নেই। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে অবশ্যই তারা এক সময় পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে সবাই ঐক্যর কথা বলেছেন। ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবিধানের মধ্যে যে মৌলিক বিষয়গুলো রয়েছে, তার প্রথমটিই হচ্ছে গণতন্ত্র। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়ে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ হয়। দেশে এখন যে শাসন ব্যবস্থা চলছে, তাতে মানুষের কোনো মৌলিক অধিকার নেই। এটা চলতে পারে না। কারণ দেশের মালিক জনগণ।
তিনি বলেন, ইতিহাস বলে বাংলাদেশে এমন কোনো সমস্যা নেই যা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সমাধান করা যায়নি। স্বাধীনতার যুদ্ধেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। অর্থাৎ অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, এটা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।
ড. কামাল বলেন, দেশের মালিক জনগণ। সংবিধানে আছে যারা নির্বাচিত তারা দেশে পরিচালনা করবেন। নির্বাচনের অর্থ হলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরাই দেশ পরিচালনা করবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে অনেকেই বললেন, নির্বাচনের পর আমরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছি। নির্বাচনের পরদিনই দেশে অন্তত হরতাল হওয়া উচিত ছিল, আমি এটার সমর্থন করি। কিন্তু আমরা পারিনি। তবে ভবিষ্যতে যে পারব না, তার কোনো মানে নেই।
নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সভায় গণস্বাস্থ্যর প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাবির অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিকল্প ধারার সভাপতি নুরুল আমীন বেপারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন
এছাড়া দৈনিক মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম পথিক, গণদলের সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি রায়, আবদুস সাত্তার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।