ভারত আমাদের বন্ধু, অনিষ্ট করবে বলে মনে করি না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

438

ঢাকা: ভারতের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি বিপুল বিজয় পাবার পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয় কিনা – তা নিয়ে বাংলাদেশের ‘চিন্তার কারণ’ আছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতে গত পাঁচ বছর যাবত ক্ষমতাসীন বিজেপি বলে আসছে যে দেশটিতে বহু অবৈধ অভিবাসী রয়েছে – যারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়েছে বলে দাবি করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই।

এই কারণ দেখিয়ে আসাম রাজ্যের মতো নাগরিক যাচাইয়ের একটি উদ্যোগ বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গেও নিতে চায় বিজেপি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। তবে এ বিষয়টিকে সরকার কিভাবে দেখছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের জন্য অনিষ্টকর কোন কিছু ভারত করবে বলে তিনি মনে করেন না।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের সময় আসাম রাজ্যে যে বিতর্কিত নাগরিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে চল্লিশ লাখ মানুষ বাদ পড়েন এবং এদের বেশিরভাগই বাংলাভাষী মুসলমান।

আসামের মতো একটি নাগরিক তালিকা পশ্চিমবঙ্গেও করতে চায় বিজেপি।

ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ দেশটির পার্লামেন্টে এমন কথাও বলেছেন যে নাগরিক তালিকার বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশীদের মদদ দেয়া।

বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের রাজ্যগুলিতে এবারের নির্বাচনে বেশ ভালো ফলাফল করেছে বিজেপি।

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় থাকার সময় গত পাঁচ বছর বিজেপির মুসলিমবিরোধী মনোভাব ছিল প্রবল। সেক্ষেত্রে তথাকথিত নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টিকে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশী বিশ্লেষকরা।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বন্ধুত্ব থাকলে কখনো বন্ধু অপর বন্ধুর অনিষ্ট করে না। ভারত সরকার আমাদের বন্ধু। আমাদের কোন অনিষ্ট করবে বলে মনে করিনা।”

নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিলের বিরুদ্ধে আসামে বিক্ষোভ।
নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের কাজটিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে বর্ণনা করেন মি: মোমেন।

তার কথায়, বিষয়টি নিয়ে এখনো বাংলাদেশের চিন্তার কোন কারণ নেই বলে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখা যাক কী ইস্যু হয়, আমরা হাওয়ার মধ্যে কোন বক্তব্য দিতে চাইনা।… যদি কোন সিরিয়াস ইস্যু হয়, তখন আমরা এ নিয়ে আলাপ করবো।”

এবারের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের চার পাশের রাজ্যগুলোতে বিজেপির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পরিষ্কার উত্থান দেখছেন বাংলাদেশী বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামানের মতে ভারতে তথাকথিত নাগরিকত্ব বাছাইয়ের বিষয়টিকে শুধুই রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবেনা

তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম অঞ্চলে একটা বড় ধরণের ধাক্কা আসছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হতে পারে।”

দ্বিতীয় বারের মতো নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন দেশটির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান মনে করেন, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও যদি বিজেপি নাগরিকত্ব বাছাইয়ের পথে হাঁটে, তাহলে বাংলাদেশের চিন্তিত না হয়ে উপায় নেই।

এ প্রসঙ্গে রওনক জাহান বলেন, “তাদের নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মুসলমানদের উপরে কিংবা বাঙালিদের উপরে তারা যে ধরণের শ্লোগান ব্যবহার করছেন, এগুলো হলে আমাদের সাধারণ মানুষ তো খুব বিক্ষুব্ধ থাকবে।”

“কিন্তু আমাদের সরকার তো কখনোই চাইবে না ভারতের সাথে সম্পর্ক বিরূপ হোক। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে তো তাদের দেখতে হবে” – বলেন রওনক জাহান।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.