নামিদামি ব্রান্ডের ৫২টি ক্ষতিকর খাদ্যপণ্যের তালিকা নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন ভোক্তারা

269

ঢাকা: বিএসটিআই সম্প্রতি যে ৫২টি খাদ্যপণ্যকে ল্যাব পরীক্ষায় অকৃতকার্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে তার বেশিরভাগ পণ্যই বেশ জনপ্রিয় এবং ভোক্তারা নিয়মিত ব্যবহার করেন। খবর বিবিসি বাংলার।

এমন অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি কাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন সেটা নিয়েও আস্থাহীনতার মধ্যে আছে সাধারণ মানুষ।

ঢাকার বনানীর একটি সুপার শপে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সানজিদা জামান চৌধুরী।

নিজের সঙ্গে তিনি একটি তালিকা নিয়ে আসেন। তবে সেটা কোন বাজারের ফর্দ নয় বরং বিএসটিআই সম্প্রতি যে ৫২টি খাদ্যপণ্যকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলোর তালিকা।

যার মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য কয়েকদিন আগেও তিনি নিয়মিত ব্যবহার করতেন।

পরিচিত এই পণ্যগুলো ল্যাব পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বেশ উদ্বেগের মধ্যে আছেন মিজ চৌধুরী।

“তালিকায় যেসব পণ্য দেখলাম তার অনেকগুলোই আমরা ব্যবহার করেছি। এখন নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোই যদি এমন করে তাহলে আমরা কাদের ওপর আস্থা রাখবো?”

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নিজের এমন উদ্বেগের কথা জানান কেনাকাটা করতে আসা মাহমুদা নাসরিনও।

তার দাবি খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে সেগুলো যেন আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে।

“আমাদের পরবর্তী যে প্রজন্ম তাদের কথাটাও কি কেউ ভাবে না! এরা তো বিষ খাচ্ছে। আমাদের দেশে তো আইন আছে অথচ বাস্তবায়ন নেই, কর্তৃপক্ষের আরও সুদৃষ্টি থাকা দরকার”

বনানীর এই সুপার শপ থেকে শুরু করে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় পুলিশ, ডিবি ও বিএসটিআই এর সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পণ্যের মান থেকে শুরু করে ল্যাব পরীক্ষায় অকৃতকার্য পণ্যগুলো কোথাও ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে কিনা, সেটাই খতিয়ে দেখছিলেন তারা।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন যে তারা প্রতিনিয়তই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করেন যেটা সংবাদমাধ্যম প্রচার করে না।

সারা বছর এমন অভিযান সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করা যায়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা চেষ্টা করছি এই পণ্যগুলোকে বাজার থেকে তুলে দিতে, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। অভিযানও চলবে।”

“তবে এটা ঠিক যে সারা বছর যদি এই মনিটরিং আরও জোরদার করা যেতো তাহলে ফলাফল আরও ভাল হতো।”

দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়, নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর, বিএসটিআইসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন?

এ ব্যাপারে খাদ্য সচিব শাহবুদ্দিন আহমেদ জানান, নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় আনাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“যদি সবার মধ্যে সমন্বয় আর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তো এমন প্রশ্নই উঠতো না। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে কয়েকটা মন্ত্রণালয় জড়িত, এটা কারও একক নিয়ন্ত্রণে নেই। তাদেরকে এক ছাতায় এনে সমন্বিত সিদ্ধান্ত আসাটা একটু কঠিন।”

“তবে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো যদি যার যার জায়গা থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে তাহলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। ”

তবে বিএসটিআই এর তালিকাভুক্ত এই পণ্যগুলোর বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সেই পণ্যগুলোর প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে দেয়া হবে নাকি কোন নির্দিষ্ট লটের পণ্যের উৎপাদন বন্ধ করা হবে সে বিষয়ে হাইকোর্টের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশের অপেক্ষায় আছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.