ছাত্রলীগের হামলার শিকার সেই শ্রাবণী শায়লা, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়

242

ঢাকা: গতকাল সোমবার বিকালে ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে চলছে উত্তেজনা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ।কমিটি ঘোষণার পর অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত, অগ্নিসন্ত্রাসে যুক্ত, বিভিন্ন মামলার আসামীদের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের একাংশ।

সোমবার সন্ধ্যায় ওই বিক্ষোভে দু দফা হামলা ঘটনায় ডাকসুর তিন নেতাসহ অন্তত ৮জন আহত হয়েছেন।

হামলায় আহতরা হলেন- ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য ও ডাকসুর বর্তমান সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, কবি সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ডাকসুর আরেক সদস্য ফরিদা পারভীন, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বি এম লিপি আক্তারসহ কয়েকজন।এছাড়াও এ হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের নেত্রী শ্রাবণী শায়লা। তিনি কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

শায়লার ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ছবিতে জমা পড়ছে নানা নেতিবাচক মন্তব্য। সমবেদনাও জানাচ্ছেন কেউ কেউ।

পাশাপাশি অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করছেন শ্রাবণী শায়লা কর্তৃক এক ছাত্রীকে মারধরের একটি ছবি।

তারা স্মৃতিচারণ করছেন ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারির সেই ঘটনাটি। সেদিন ছাত্রলীগের হামলার বিচার, তাদের নামে দায়ের করা ভাংচুর মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দে’র ব্যানারে বেশ কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ করে।

আধঘণ্টার বেশি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে তার পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা।

পরে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ভিসিকে উদ্ধার করে তার কার্যালয়ের নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েকশ’ নেতাকর্মী এসে পুরো প্রশাসনিক ভবন ঘিরে ফেলে।

একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক মারধর করে। তাদের মারধর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকসহ প্রায় ৪০ জন আহত হন।

সেদিন এ হামলার বেশ কিছু ছবি গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয় যে ছবিটি তাহলো, ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রী অন্য এক সাধারণ নারী শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হওয়ার দৃশ্য। আর আক্রমণকারী ওই নেত্রীই হলেন শ্রাবণী শায়লা।

ছবিতে দেখা গেছে, শ্রাবণী এক নারী শিক্ষার্থীর চুল ধরে টেনে ও ওড়না ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে সেসময় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।

সে ঘটনার পর লাঞ্ছনার শিকার ঢাবির ডিজেস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমাদের এক সিনিয়র আপুকে ছাত্রলীগের ছেলেরা ক্রমাগত লাথি দিলে আমার বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। আমাকে একা পেয়ে শায়লা ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। সে আমাকে তখনও মেরে যাচ্ছিল আর বলছিল, কেন আন্দোলন করলি? আন্দোলন করে কি? আমরা তা দেখে নেব। এরপর সে আমার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়, জামা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।’

গতকাল সোমবার বিকালে ঘোষিত ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা হয়নি সেই শ্রাবণী শায়লার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.