বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে বঙ্গোপসাগরের মৎস্য আহরণ!

384

চট্টগ্রাম:  বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার নৌযানকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

বাংলাদেশ টেকসই উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ প্রকল্পের অধীনে শুরুতে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত দশ হাজার যান্ত্রিক নৌযান ও ২৫০টি  ইন্ডস্ট্রিয়াল ট্রলারকে এই যোগাযোগের আওতায় আনা হবে।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমুদ্রে মৎস্য সম্পদের সংরক্ষন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য মৎস্য আহরণে নিয়োজিত প্রত্যেক নৌযানের কর্মকান্ড সম্পর্কে সূনিশ্চিত তথ্য প্রয়োজন। এই জন্য সব নৌযানকে নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিযে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নৌযানগুলোর সাথে সব সময় সম্পৃক্ত থাকার  জন্য ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম (ভিএমএস) ও অটোম্যাটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) নামে দুই ধরনের প্রযুক্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবুল হাসনাত জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলোর জন্য ভিএমএস এবং অন্যান্য নৌযানের জন্য এআইএস চালু করা হবে। এতে সমুদ্রে নৌযানগুলোর অবস্থান, কোন এলাকায় মৎস্যশিকার করছে এইসব তথ্য জানা থাকবে। এইসব নৌযান কোনও দুর্ঘটনার শিকার হলেও প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহজ হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নৌযানগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো নিজ উদ্যোগে এই পদ্ধতি চালু করতে পারবে। তবে, অন্য নৌযানগুলোতে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষন দেওয়ার প্রয়োজন হবে বলেও জানান আবুল হাসনাত।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেয়া পাচ বছর মেয়াদি টেকসই উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্যাটেলাইট যোগাযোগের নিজস্ব বেইজ স্টেশন জয়েন্ট কো- অর্ডিনেশেন সেল স্থাপন করা হবে মৎস্য বিভাগের জন্য। মূলতঃ এই বেইজ স্টেশন থেকেই নৌযানগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখা হবে। সমুদ্র সম্পর্তিক অন্যান্য বিভাগ ও দপ্তরসমূহও জেসিসিতে সম্পৃক্ত থাকবে।

 বর্তমানে  বঙ্গোপসাগরে একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার এক তৃতীয়াংশ এলাকায় মৎস্য আহরণ করছে ২৫০টি ইন্ড্রাষ্টিয়াল ট্রলার ও ৩২,৫০০ যান্ত্রিক নৌযান। এছাড়াও আছে আরও ৩৫ হাজার অযান্ত্রিক নৌযান ।

মৎস্য বিভাগের অনুসন্ধানী জাহাজ ‘আরভি মীন সন্ধানী’ নতুন মৎস্য ক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য গত তিন বৎসর ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই অনুসন্ধান শেষে নতুন মৎস্য ক্ষেত্র অবিষ্কার হলে নৌযানের সংখ্যাও বাড়বে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেডের সহকারি মহাব্যবস্থাপক বখতিয়ার উদ্দিন জুমবাংলাকে জানান, মৎস্য বিভাগের সাথে স্যাটেলাইট ব্যবহার নিয়ে প্রাথমিক অলোচনা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভেরি স্মল এপারচার টার্মিনাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নৌযানগুলোকে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক-এর আওতায় আনা সম্ভব হবে।

 এর জন্য একটি বেইজ স্টেশন এবং নৌযানগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি।

বছরে ৩৫-৩৭লাখ টন মাছ উৎপাদন করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। এর মধ্যে ১৭-২০ শতাংশ মৎস্য আহরণ করা হয় বঙ্গোপসাগর থেকে।

বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো নৌবাহিনীর টেলিযোগাযোগে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থেকে সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করে। কিন্তু যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানগুলো যখন সমুদ্রে থাকে তখন এগুলো সব ধরনের নেটওয়ার্ক থেকেই বিচ্ছিন্ন থাকে।

এদিকে, বাংলাদেশ যান্ত্রিক- অযান্ত্রিক নৌযান মালিক সমিতির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম বাবুল জুমবাংলাকে বলেন, সব ধরনের নৌযানকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে নিয়ে আসা সম্ভব হলে এই ক্ষেত্রে নিয়োজিত মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি পরিকল্পিত মৎস্য আহোরনও সম্ভব হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.