সংলাপে এসে আবার কেন আন্দোলন : প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, তবুও তালিকা চাওয়া হয়েছে * খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই * আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন
আলোচনা আর আন্দোলন কর্মসূচি একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব?- এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একদিকে আলোচনা করবেন, আবার আরেকদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন- এটা কী ধরনের সংলাপ? সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। জানি না, দেশবাসী-জাতি এটা কীভাবে নেবে।
শনিবার বিকালে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হোক- আমরা, সেটাই চাই। নির্বাচন সামনে রেখে যখন ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে, তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বাগত জানালাম। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও যারাই দেখা করতে চাচ্ছেন, আমরা করছি। ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট- দুটো গ্র“পের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়ে গেছে। এরপর আরও সবার সঙ্গে আমরা সংলাপ করব। যারা আলাপ করতে চেয়েছেন, সংলাপ করতে চেয়েছেন, আমরা করেছি। একটা সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারা যে সব দাবি-দাওয়া দিয়েছেন, যেসব দাবি-দাওয়া আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, আমরা বলেছি সেটা করব।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষের যেন আর জ্বালাও-পোড়াও ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। দেশের মানুষ তার ভোটটা শান্তিতে দিতে পারুক। দেশের মানুষ তার মনমতো সরকার বেছে নিক; সেই চিন্তাটা করেই কিন্তু আমরা এই সংলাপে বসেছি এবং আলোচনা করেছি।
বৃহস্পতিবার গণভবনে সংলাপে প্রত্যাশিত সমাধান না পাওয়ার কথা জানিয়ে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুললেও সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি পূরণ করা হবে না বলে তাদের জানিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, রাজবন্দিদের তালিকা দেন। তবে তিনি বলেন, আমরা কাউকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করিনি। তাই যদি করতাম, তাহলে খালেদা জিয়া যখন ২০১৫ সালে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারল, তখনই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। সেটাও তো আমরা করিনি। কাজেই আমরা তো রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১০টা বছর ধরে মামলাটা চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলেও তো ১০ বছর লাগার কথা না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির বিষয়ে সরকারের কিছু করার সুযোগ না থাকার কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের তো কিছু করার নেই। আর বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীন বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সে রায়ে খালেদা জিয়া সাজা ভোগ করছেন এবং তারেক জিয়া ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়া ও তারেকের দুর্নীতি ‘আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক জিয়ার জন্য তো আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, আর খালেদা জিয়ার জন্য কয়েকটি কেসে তারা সাক্ষী দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত যে, এরা দুর্নীতিতে জড়িত। আমাদের করার কী আছে? তারপরও আমরা বলেছি, আপনারা তালিকা দেন। আমরা দেখব কী করা যেতে পারে। আমরা খুব চাই সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এদেশের মানুষের যেন আর ওই জ্বালাও-পোড়াওয়ের সম্মুখীন হতে না হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ছেলের মৃত্যুতে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বন্ধ দরজা থেকে ফিরে আসার বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এরপরও বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার ক্ষেত্রে জনগণের চিন্তাই মাথায় রেখেছি। শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে এবং মানুষ শান্তিতে ভোট দিক, তাদের পছন্দের সরকার বেছে নিক- সেজন্যই আমরা এ সংলাপে বসেছি, আলোচনা করেছি। অধিকাংশ সময় তারাই কিন্তু বলেছে, আমি কিন্তু একটা কথাও বলিনি। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এই জোটের যারা, তারা কথা বলেছেন। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে কথা। একেবারে সর্বশেষ সমাপ্তির জন্য যতটুকু বলা, সেটুকু আমি বলেছি। আর সেখানেও আমি বলেছি, কোনটা আমরা করতে পারি, কোনটা কীভাবে করা যায়, সেটা বলে সমাপ্তি টেনেছি। কিছু দাবি আমরা মেনেও নিয়েছি।
আজকে যখন গণতান্ত্রিক ধারাটা চলছে, আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাটা থাকুক। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয়। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। ১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটা সম্ভব হয়েছে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি চায়, মানুষের ভালো চায়। মানুষ ভালো থাকুক, মানুষের জীবনমান উন্নতি হোক, সেটা আওয়ামী লীগ চায়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।