সৌম্য-কায়েসের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’
স্পোর্টস ডেস্ক: আগে ব্যাট করতে নেমে উইলিয়ামসের সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। অনেকেই ভাবছিলেন সাকিব-তামিম বিহীন দল এই বৈতরণী আদৌ কি পার হতে পারবে? প্রথম বলে ইনফর্ম লিটন দাস আউট হলে চিন্তা আরও বাড়ে।
কিন্তু সব দুশ্চিন্তা একেকটি বাউন্ডারির সঙ্গে সঙ্গে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েস।
দুজনের জোড়া সেঞ্চুরি আর রেকর্ড পার্টনারশিপে ভর করে জিম্বাবুয়েকে চতুর্থবারের মতো বাংলাওয়াশের স্বাদ দিল বাংলাদেশ। ২৮৭ রানের কঠিন টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭.৫ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলকে নিরাপদে রেখেই সৌম্য ১১৭ এবং ইমরুল ১১৫ রান করে আউট হন। মাশরাফি বাহিনী সিরিজ জিতে নিল ৩-০ ব্যবধানে।
কিন্তু টাইগারদের শুরুটা ছিল ভয় জাগানিয়া। ইনফর্ম ওপেনার লিটন দাস জার্ভিসের করা ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। লিটনের বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হন সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েস। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ১৫.২ ওভারেই দলের স্কোর ১০০ পার হয়।
৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল। ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সৌম্যও।
এরপর যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন দীর্ঘ ফর্মহীনতায় ভূগতে থাকা সৌম্য সরকার। উইকেটের চারদিকে শুরু হয় চোখ ধাঁধানো সব চার-ছক্কার মার। যেন সেই পুরনো ভয়ডরহীন ব্যাটিং। ৮১ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ৯২ বলে ৯ চার ৬ ছক্কায় ১১৭ রানে থামল সৌম্য ঝড়! ততক্ষণে সাকিব-তামিমের দ্বিতীয় উইকেট জুটির ২০৭ রানের রেকর্ড ভেঙে গেছে। সৌম্য-ইমরুল জুটি ভেঙেছে ২২০ রানে। আর ৫ রান করলেই দেশের হয়ে সাকিব-রিয়াদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙে যেত।
সৌম্যর বিদায়ের পর আজ আর ভুল করলেন না ইমরুল কায়েস। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাজে শটে আউট হয়েছিলেন ৯০ রানে। আজ চলতি সিরিজে দ্বিতীয় এবং নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন এই ওপেনার। সৌম্য ঝড় চলাকালীন একটু দেখেশুনে খেলছিলেন ইমরুল। তারপরেও তিন অংকে পা রাখলেন ৯৯ বলে ৯ চার ১ ছক্কায়। দল যখন জয় থেকে ১৩ রান দূরে, ১১২ বলে ১০ চার ২ ছক্কায় ১১৫ করা ইমরুল শিকার হলেন মাসাকাদজার।
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী হলেন মিঠুন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এই জুটিই ফিনিশিং টাচ দিয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন। আজও একই কাজ সম্পন্ন করে মাঠ ছাড়লেন দুজন। ৭.৫ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক ২৮ এবং মিঠুন ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৬ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। তাদের শুরুটাও ছিল খুবই বাজে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সিফাস জুয়াওয়ের (০) স্টাম্প উপড়ে দেন তরুণ পেস বোলিং অল-রাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পরের ওভারেই আরেক পেসার আবু হায়দার রনি বোল্ড করে দেন অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে (২)।
৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া জিম্বাবুয়ের হাল ধরার চেষ্টা করেন ব্রেন্ডন টেইলর এবং শন উইলিয়ামস। দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে ১৩২ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন। অবশেষে নাজমুল ইসলাম অপুর ঘূর্ণিতে ৭২ বলে ৮ চার ৩ ছক্কায় ৭৫ রান করা ব্রেন্ডন টেইলর মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন। হাফ সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসের সঙ্গী হওয়া সিকান্দার রাজা এসেই ছক্কা হাঁকান নাজমুলকে। আরও একটি বড় জুটির দেখা পায় জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশি বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে তিন অংকের দিকে এগিয়ে যান উইলিয়ামস। এর মধ্যেই নাজমুলের ঘূর্ণিতে সিকান্দার রাজা (৪০) সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হলে ভাঙে ৮৪ রানের জুটি। তবে উইলিয়ামসন ঠিকই ১২৪ বলে ৭ বাউন্ডারিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৪৩ বলে ১০ চার ১ ছক্কায় ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। পিটার মুর ২১ বলে ২ ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস খেলে দলের স্কোর ২৮৬ তে নিয়ে যান।
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতিমধ্যেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ হোয়াইটওয়াশ মিশনে স্বাগতিক দলের একাদশে নেই ফজলে মাহমুদ রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মুস্তাফিজুর রহমান। এই তিনজনের জায়গায় একাদশে এসেছেন সৌম্য সরকার,আরিফুল হক এবং আবু হায়দার রনি। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে একাদশেও চাতারা এবং মাভুতা জায়গায় দলে এসেছেন রিচার্ড এনগারাভা এবং ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।