রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব
নিউজ ডেস্ক: এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে বিশ্ব নেতাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বাতিল এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘সেইফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভুক্তভোগী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে এই প্রস্তাবনা বিশ্ব নেতাদের কাছে উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশানার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যেখানে তারা শতাব্দী ধরে বসবাস করত, সেখান থেকে তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিলেও ভিন্ন দেশে এই নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কথাও বিশ্ব নেতাদের অবহিত করে তিনি বলেন, মিয়ানমারের আরাকানের এই বিপুল সংখ্যক নাগরিকদের স্থান দেওয়ার বিরূপ প্রভাব আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর পডছে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি দায়িত্বশীল সরকার হিসাবে আমরা বাংলাদেশের সীমানা খুলে দিয়েছি এবং জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা কেবল তাদের জীবনই বাঁচাইনি, আমরা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছি। আমরা চাই রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের মূল ভূমিতে ফিরে যাক।
রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়ায় আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। ভূমির স্বল্পতা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পরিবেশের ওপর প্রভাবের কারণে আমরা তাদের ভাসান চর নামে একটি নতুন দ্বীপে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছি। সেখানে তাদের আরও ভালো জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবে।
রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক বিষয় হল, জাতিসংঘের ২০১৮ সালের জায়েন্ট রেসপন্স প্লান বাস্তবায়নের জন্য জন্য ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার হলেও মাত্র ৩৩ শতাংশ তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য আক্রান্ত জনগোষ্ঠির জন্য মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আরও দায়িত্বশীল মনোভাব দেখাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েই তা করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বকে অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রত্যেক উদ্বাস্তু তার নিজের দেশে নিরাপদে ফেরত চায়। মিয়ানমার থেকে উৎখাত হওয়া মানুষগুলোকে নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে।
এদিকে সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস ও যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ছিলেন।