সুদ-ঘুষখোর, খুনি-দুর্নীতিবাজ সবাই এক হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক সংবর্ধনা
নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলের ভেতরের বেঈমানদের কারণেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আর এখন সুদখোর, ঘুষখোর, খুনি ও দুর্নীতিবাজ সবাই এক জায়গাঁয় হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে এখন কামাল হোসেনরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে। জনগণ তাদের ভোট দিলে দেবে। এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে ফেলবে। এরা দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে, এরা ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে মিলে দেশ ধ্বংস করবে। কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।
জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে এসে নিউ ইয়র্কের হিলটন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৮ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া ওই নাগরিক সংবর্ধনায় আরও বক্তব্য দেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
এতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা পরিবর্তন করতে চায়, তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারবে না। খাবে তো লুটপাট করে। আমার চাচা কামাল হোসেন সাহেব, তিনি এক হয়েছেন। তারসঙ্গে গেছে বিএনপির তারেক জিয়া ও মওদুদ আহমেদ। তাদের সঙ্গে এক হয়েছে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সুনজরে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না। এরা জোট বেঁধেছে চোরদের নিয়ে। ছেলেও চোর। মাও চোর।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার প্রিয় ব্যক্তিরা তারই বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এতিমের টাকা মেরে দেওয়ার মামলায় শাস্তি হয়েছে। তারেক দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এ সব দুর্নীতিবাজদের নিয়ে ড. কামাল হোসেন এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। দেখেন, কারা এক হয়েছে। এই চরিত্রের লোকগুলো ক্ষমতায় এলে, দেশ লুটেপুটে খেতে পারবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটালের একটা ভালো দিকও আছে। খারাপ দিকও আছে। এটা নিরাপদ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করেছি। যদিও এর বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। আমি স্পষ্ট বলতেক চাই, সাংবাদিকরা শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থ দেখছেন। সামাজিক সমস্যা যে সৃষ্টি হচ্ছে, সেটিতে সাংবাদিকদের দৃষ্টি নেই। সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই ডিজিটাল আইন। এটা আমাদের সাংবাদিকদেরও বোঝা উচিত। খালি নিজেদের স্বার্থ দেখলে চলবে না। সাংবাদিকদের সমাজের স্বার্থ দেখতে হবে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে প্রবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করুন। এখন আর অন্য কোন চিন্তা নেই। এখন একটাই চিন্তা, সেটা হলো- সমগ্র দলকে ঐক্যবদ্ধ করে, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে । এগিয়ে যাবে।
আমার সততাই আমার শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কারণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছি। ড. ইউনূসের বন্ধু হিলারির অনুরোধে আমাদের দুর্নীতির মামলা দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের সকল তথ্য ভুয়া বলেছে কানাডার আদালত।
রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সব রকম ব্যবস্থা তাদের জন্য করে যাচ্ছি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সরকার বিরোধী জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে তারা কিভাবে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন? তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তারা যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তা আমরা ফিরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এখন ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মাহমুদুর রহমান মান্না এই দুর্নীতিবাজদেরকেই সঙ্গে নিয়েই লড়াইয়ে নেমেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ নতুন জোটকে সমর্থন দিয়েছেন কিন্তু অতীতে তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মইনুল হোসেন কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করেছিলেন, সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন বনাম রাষ্ট্র। ওই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত।
আর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি নিজের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ অভিযুক্ত। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের সরকারে অর্ন্তভূক্ত করেছিলেন।