ঢাকা: বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে বাংলাদেশে তৈরি স্মার্ট কার্ড। এর ফলে আগামীতে স্মার্ট কার্ড রপ্তানির বিষটিকে সম্ভবনাময় খাত হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)। অন্যদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড দিতে না পারলেও আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে ১০ কোটি ভোটারের হাতে এ কার্ড তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, তরুণদের কাজে লাগিয়ে দেশে স্মার্ট কার্ড তৈরি হচ্ছে। এসব কার্ড বর্তমানে দেশের ৫৪ জেলায় বিতরণ চলছে। পর্যায়ক্রমে সব নাগরিক স্মার্টকার্ড পাবে। দেশের কোন ভোটার বাদ যাবে না, সবাই স্মার্টকার্ড পাবে।
তিনি বলেন, দেশের সব নাগরিক স্মার্ট কার্ড পেলে রপ্তানিতে যাব আমরা। মেশিনগুলোকে আর বসিয়ে রাখব না। বর্তমানে যে মেশিন রয়েছে এগুলো দিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাথা নত করিনি। তারা সময়মত আমাদের কার্ড না দেওয়ায় ক্ষতিপূরুণ আদায় করেছি।
সূত্র জানায়, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর দেশের দক্ষ জনবল দিয়ে প্রতিদিন ১ লাখ স্মার্ট কার্ড উৎপাদন হচ্ছে; যা আগের চেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি। এ উদ্যোগে দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তি বিকাশের সুযোগ হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সম্মান বিবেচনায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৭ আগস্টে দেশীয় প্রযুক্তি, নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদন করছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও জনবল ব্যবহারের কারণে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে ইসির। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি টেকসই সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং নিজস্ব সক্ষমতাও অর্জিত হয়েছে।
এই উদ্যোগের ফলে শুধু বর্তমানে নিবন্ধিত ভোটাররাই নন ভবিষ্যৎ ভোটারদের জন্যও বাধাবিঘ্নহীনভাবে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব নিবন্ধিত নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে নির্বাচন কমিশন এসব উদ্যোগ নিয়েছে।
ইসির কারিগরি কমিটির সদস্যরা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা স্মার্ট কার্ডের পারসোনালাইজেশনের কাজ দেশীয়ভাবেই করেছি। এখন বিদেশ থেকে স্মার্টকার্ড আমদানি না করে সার্বিক নিরাপত্তা ও কার্ডের মান নিশ্চিত করে যৌক্তিক হারে মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে বিএমটিএফের মাধ্যমে বর্তমানে কার্ড তৈরি করা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা স্মার্ট কার্ডের অপব্যবহার রোধে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, স্মার্ট কার্ডের যাতে কোন প্রকার অপব্যবহার না হয়, কেউ যেন অপব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সিইসি বলেন, আমরা আশা করি যে উদ্দেশ্যে স্মার্ট কার্ড তৈরী ও বিতরণ করা হয়েছে তা সফল বাস্তবায়ন হবে। স্মার্ট কার্ড সাথে থাকলে আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকেন আপনার পরিচিতি থাকবে।
জানা যায়, প্রথম ধাপে এর আগে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর ৩৭টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন গুলোতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে ইসি। পরে ২০১৮ সালের আগস্টে বাকি ২৭ জেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও বিতরণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ১৪ ইসির সঙ্গে ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবারর্থুর সাথে ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দেশের ৯ কোটি ভোটারের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের কথা ছিল। এরপর ওই চুক্তির মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় কিন্তু তারপরও ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি কার্ড দিতে ব্যার্থ হওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইসি। এখন তরুণদের কাজে লাগিয়ে দেশে স্মার্টকার্ড তৈরি করছে ইসি।