বাঙ্গালি জাতির বাতিঘর বঙ্গবন্ধু

466

দি হেগ: দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস-২০১৮ পালন করেছে। দূতাবাস কর্মকর্তাগণ, তাদের পরিবারের সদস্যবর্গ, নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং নেদারল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড: জিয়া রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে শোক দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি পাঠের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ সকলের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়।

নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে জনাব জয়নাল আবেদীন, জনাব মোস্তফা জামান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মাঈদ ফারুক বঙ্গবন্ধু স্মরণে বক্তৃতা প্রদান করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ, সংগ্রাম, নীতি ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন এবং “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর কঠোর পরিশ্রমের ও দৃঢ় সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করে। বক্তৃতায় তারা উল্লেখ করেন ১৫ আগস্টের জঘন্য হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু জনমানবের নেতা হিসেবে মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করছেন। তারা সকলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের আংশিক কার্যকরিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আদালতের রায় সম্পূর্নভাবে কার্যকর করার জন্য পলাতক খুনীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। নেতাগণ তাদের বক্তৃতায় যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং উল্লেখ করেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রকৃতপক্ষে ‘সোনার বাংলা’ এর স্বপ্নকে একটি বাস্তব রূপ দান করছেন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক জিয়া রহমান, তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা এবং কিভাবে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই একের পর এক মাইলফলক অর্জন করছে তা উল্লেখ করেন । তিনি আরো বলেন যে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও অধিকার অর্জনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর সাহসিকতার কোন সীমা ছিল না এবং ‘ভয়’ শব্দটি তাঁর অভিধানে ছিল না। অকুতোভয় এই নেতা তাঁর সমগ্র জীবন বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্য উৎসর্গ করেছেন। অধ্যাপক জিয়া ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নির্মানের রাজনৈতিক দর্শন’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তার ভাষণে একজন বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম আত্মত্যাগের জন্যই আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছি এবং একজন গর্বিত বাঙালি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য দিয়ে এই জগতে প্রেরণ করেছেন, বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন। এই মহান নেতার দূরদর্শিতা এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব-ই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিল। স্বাধীনতার পর, তার রাজনৈতিক বিচক্ষনতা এবং অদম্য সাহসের কারণন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। ক্ষনজন্মা এই নেতা ক্ষুধাহীণ, দারিদ্রমুক্ত ও বৈষম্যহীণ এক সমাজ গড়ে তোলার জন্যই নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন ।

রাষ্ট্রদূত বেলাল আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ফলে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক শাসনের নেতৃত্বেও অপূরনীয় অভাব সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার হারিয়ে যাওয়া আশার সন্ধান খুঁজে পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের উপমহাদেশের একজন মহান নেতা ছিলেন না, তিনি নতুন প্রজন্মের জন্য সদা অনুপ্রেরণাদানকারী চেতনা। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শকে পৌঁছে দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। আসন্ন দিনগুলিতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ত নতুন চিন্তাধারা নিয়ে আসবে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তাদের চিন্তাভাবনায় বঙ্গবন্ধুর নীতি ও মতাদর্শ ধারণ করে। রাষ্ট্রদূত বেলাল সকলকে আধুনিক সময়ের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, তিনি প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশীকে তাদের নিজ নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানান এবং আমাদের শিশু- কিশোরদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিস্থাপন করার আহ্বান জানান।

শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও জানতে অনুপ্রাণিত করার জন্য শিশুদের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রদানের আয়োজন করা হয়েছিল। স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন বয়সের পাঁচজন শিশু-কিশোর উপস্থিত বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তিতে অংশগ্রহন করে। অংশগ্রহনকারী শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করার জন্য মান্যবর রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী ড. দিলরুবা নাসরিন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

পরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্যগণ এবং শাহাদাতবরণকারী সকলের রূহের মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরিশেষে, বঙ্গবন্ধুর জীবনী বিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.