করোনা রিপোর্টে জটিলতা : মেয়ের অভিযোগ নিয়ে অধিদফতরে শাজাহান খান

253

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ‘ভুয়া সনদ উপস্থাপন’ সংক্রান্ত ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান। মেয়ের পক্ষে বাবা সাবেক নৌপরিবহন বিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খান সশরীরে স্বাস্থ্য অধিদফতরে উপস্থিতি হয়ে এ অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগে ঐশী খান বলেন, বিদেশযাত্রার জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে তাকে ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই তিনি লন্ডনযাত্রার উদ্যোগ নেন। তবে একই নমুনার ক্ষেত্রে অনলাইনে যে রিপোর্টটি সংরক্ষণ করা হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে তিনি করোনা পজিটিভ। ফলে বিমানবন্দরে তাকে হেনস্থা হতে হয়। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন তিনি।

সোমবার (২৭ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে উপস্থিত হন শাজাহান খান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি হেলথ) বরাবর লেখা মেয়ের লিখিত অভিযোগটি সরাসরি তার কাছেই জমা দেন। এসময় তিনি মৌখিকভাবেও মহাপরিচালকের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

শাজাহান খানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঐশী খান ইংল্যান্ডের কোভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগে ফেব্রুয়ারিতে তিনি ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। এরপর আর ফিরতে পারছিলেন না। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল শুরু হলে তিনি ইংল্যান্ড যাওয়ার উদ্যোগ নেন এবং নমুনা পরীক্ষা করান।

লিখিত অভিযোগে ঐশী খান বলেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য গত ২৪ জুলাই সরকারি নির্ধারিত মহাখালী ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টারে গিয়ে নমুনা প্রদান করি। ২৫ জুলাই বিকেল ৪টায় অনলাইনে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে দেখতে পাই। পরে আমার কাজিন ও বাবার ব্যক্তিগত সহকারী ডিএনসিসি’র করোনা আইসোলেশন সেন্টারে হাজির হয়ে টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। সেখানেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট আসার কারণেই লন্ডনযাত্রার উদ্যোগ নেন ঐশী খান। অভিযোগে লিখেছেন, বিমানবন্দরে হাজির হয়ে লাগেজ বুকিং দিয়ে ইমিগ্রেশন চেক করার মুহূর্তে তারা আমাকে জানায়, অনলাইনে আমার করোনা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ। আমার করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ ছিল না। রিপোর্টও নেগেটিভ হওয়ায় আমি আমার পরিবারের সবার সঙ্গে স্বাভাবিক চলাফেরা করেছি। আমার বাবা সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের সঙ্গে একই গাড়িতে বাসা থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াত করেছি। ফলে আমার বাবাও করোনা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন বলে আমিসহ পরিবার ‍দুশ্চিন্তায় আছি। তাছাড়া আমার এই রিপোর্ট দিয়ে এরই মধ্যে আমার বাবা সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার হওয়ায় তার সম্মানহানিও হয়েছে, যা অমার্জনীয় অপরাধ।

পুরো ঘটনা উল্লেখ করে এ ধরনের ভুল রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন ঐশী খান। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে কাউকে হয়রানি না হতে হয়, সে বিষয়েও অনুরোধ করেন তিনি।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডিজি হেলথ অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এসময় ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানান শাজাহান খানকে।

এদিকে, ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল মেডিসিনে (এনআইএলএমআরসি) ঐশী খানের নমুনাটি পরীক্ষা হয়েছিল। একই নমুনার দুই ধরনের রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান তুষার বলেন, এটি কেন হয়েছে, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

এর আগে, রোববার লন্ডনযাত্রা করতে বিমানবন্দরে হাজির হলে ঐশী খান তার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখান। তবে অনলাইনে যাচাই করে দেখা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ। পরে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে ফেরত যেতে হয় তাকে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এ ঘটনা তদন্ত করে ঐশী খানের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ উপস্থাপনের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়া হতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.