কোরবানির টাকা না থাকায় বহু রাজধানীবাসীর মাংসের অগ্রিম অর্ডার

305

ঢাকা: পরিবহন সমস্যা ও করোনার ঝুঁকি এড়াতে এবার বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশের। আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে কোরবানিও দিতে পারছেন না অনেকে। কিন্তু ঈদ বলে কথা। মাংস তো লাগবেই। তাই আগেই যোগাযোগ করছেন বাড়ির কাছের মাংস ব্যবসায়ীর সঙ্গে। অর্ডারও দিয়ে রাখছেন। এ অবস্থায় মাংস ব্যবসায়ীদের চক্র তৈরি করে দাম বাড়িয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। তাঁরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, নগর সংস্থা মাংসের দাম বেঁধে দিলেও, এমনকি দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও কোনোভাবেই নৈরাজ্য থামানো যায়নি।

বাসাবো এলাকার রিয়াজুল ইসলাম বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘কোরবানিতে এবার ঢাকায়ই থাকতে হচ্ছে। চাহিদামতো শরিকও পাচ্ছি না। তাই আমাকে মাংস কিনেই ঈদ করতে হবে। কিন্তু ঈদ এলেই যেভাবে মাংসের দাম বাড়ে তাতে বাজেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাংস পাব কি না এই শঙ্কায় রয়েছি।’ একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানিকনগরের বাসিন্দা শেখ আব্দুল্লাহও।

প্রতিবছরই রাজধানীর কিছু মানুষ বাড়ি যেতে পারে না। গ্রামের বাড়ি কোরবানি দেওয়ায় এখানে আর কোরবানিও দেয় না। তারা ঈদের আগের দিন মাংস কিনে রাখে। গত বছর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল খুবই কম। গত বছর ছোট দোকানগুলোতে এক থেকে চার মণ গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১০টা পর্যন্ত গরু বিক্রি করেছেন। সেটাও আগাম অর্ডারের ভিত্তিতে নয়। কিন্তু এ বছর করোনায় চিত্র বদলে গেছে। কোরবানির এখনো বাকি ১০ দিন। এর মধ্যেই মাংসের অর্ডার আসতে শুরু করেছে। তার পরিমাণও অনেক বেশি।

এবার কোরবানি না দেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিগাতলার মাংস ব্যবসায়ী কাজী আনোয়ারের দোকানে গত সোমবার পর্যন্ত আটজন ১০-১৫ কেজি করে গরুর মাংসের অর্ডার দিয়েছেন ঈদের জন্য। গত বছর ঈদের আগের দিন মাংস বিক্রি করলেও আগে থেকে এভাবে কেউ অর্ডার দেয়নি বলে জানান ওই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এবার কোরবানি না দেওয়া লোকের সংখ্যা বাড়ছে। তাই ঈদে মাংসের চাহিদাও বাড়ছে।

কাজী আনোয়ার বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন তাঁর সঙ্গে শরিকে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁর পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার গরু কেনা, মাংস কাটা, বণ্টন ইত্যাদি তদারকির কেউ নেই। তিনি তাঁকে কোরবানির আয়োজন করতে বলছেন।

মাংসের আগাম অর্ডারের কথা জানিয়েছেন মুগদাপাড়ার ব্যবসায়ী আব্দুস সালামও। তিনি বলেন, ‘সাধারণত রোজার ঈদে এমনটা হয়। মাংসের অর্ডার আসে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদের আগে এখন পর্যন্ত আমার কাছে ১৫ জন অর্ডার দিয়েছেন।’

এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, হাজারীবাগ, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের দোকানে মাংসের জন্য অর্ডার আসতে শুরু করেছে। ঈদের আগ পর্যন্ত অর্ডার আরো বাড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন।

প্রতিবছর রোজার আগে সিটি করপোরেশন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠকে গরু, ছাগলের মাংসের দাম ঠিক করে দেওয়া হয়। গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ঠিক হয়েছিল ৫২৫ টাকা; কিন্তু বাস্তবে গত বছর মধ্য রোজা থেকেই দাম বেড়ে ৫৫০ টাকায় ওঠে। চক্র তৈরি করে দাম বাড়ানোর দায়ে গত বছর দেশের বিভিন্ন বাজারের মাংস বিক্রেতাদের মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়। এর পরও ওই বছর ঈদের সময় মাংসের দাম যেমন খুশি তেমন রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে কোনো কোনো বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকারও বেশি বিক্রি হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৪৩০ টাকা কেজি। এক বছরে কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বাড়ানোর পরও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ব্যবসায়ীদের। ফলে এবার যারা আর্থিক সংকটে পড়ে কোরবানি দিতে পারবে না তারা মাংসের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.