পুত্রশোকে নির্বাক সালেহ আহমেদ, দোয়া চাইলেন

423

যুক্তরাষ্ট্র: একমাত্র পুত্র হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা সালেহ আহমেদ শুধু বললেন, ‘আপনারা ওর জন্যে দোয়া করবেন। ওর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে’। বাংলাদেশের পাঠাও এবং নাইজেরিয়ার ‘গোকাডা’র জনক মেধাবি টেক জায়েন্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফাহিম সালেহ (৩৩)কে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে অভিজাত এলাকায় নিজের বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে ১৩ জুলাই দুপুর থেকে ১৪ জুলাই অপরাহ্নের মধ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। 
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের অসহায় ভিকটিম  ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ জানাযার প্রাক্কালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরো বললেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, নিশ্চয়ই সুবিচার পাবো।’

১৯ জুলাই রবিবার দুপুরে নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৬৫ মাইল দূরে অরেঞ্জ কাউন্টির নিউ উইন্ডসোর সিটির প্লিজেন্ট হীল রোডে ‘নূর মিড হাডসন সিমেট্রি’তে ফাহিমকে দাফনের আগে একইস্থানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি অনুরোধ সত্বেও আশপাশের বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর সমাগম ঘটেছিল। জানাজার সময় ফাহিমের স্মৃতিচারণ করেন তার বোন রুবি ও রিফ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা।

ফাহিমের মা ছিলেন একেবারেই নির্বাক। এ সময় কেউই অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলেন না। কারণ, সকলের সাথেই সর্বদা অমায়িক ব্যবহার করেছেন ফাহিম। ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ আইবিএম এর উপদেষ্টা-প্রকৌশলী হিসেবে কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। পরিবার নিয়ে বাস করছেন এই অরেঞ্জ কাউন্টি সংলগ্ন পকিস্পীতে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ ১৯৭০-‘৭১ সালে রব-মাখন প্যানেলে জয়ী হয়ে ডাকসুর ম্যাগাজিন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সে সুবাদে এই প্রবাসেও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। 

জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণের জন্যে গোরস্থানের গেইটে গাড়ি থেকে নামার পর ক্রন্দনরত সালেহ’কে হেঁটে যেতে যেতে শান্তনা দেন কমিউনিটি লিডার গোলাম মাওলা মাণিক। মাণিক বলেন, ‘ফাহিম ছিলেন মা-বাবার রত্ন, কমিউনিটির স্বপ্ন এবং বাংলাদেশসহ পিছিয়ে থাকা দেশসমূহের এগিয়ে চলার অন্যতম অবলম্বন।’
ফাহিমের কাজিন নিউইয়র্ক স্টেটে সফটওয়্যার এনালিস্ট আতাউর বাবুল বললেন, ‘ফাহিমকে হারানোর ফলে গোটাবিশ্ব একজন মহৎপ্রাণের মানুষ হারালো, যিনি জীবনটা শুরুই করেছিলেন পিছিয়ে পড়া দেশসমূহের যুবশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।’ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে জানাযায় অংশগ্রহণকারি প্রতিটি মানুষই ফাহিমের ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

এদিকে, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পূর্বকল্পিত উপায়ে ফাহিমকে হত্যার সাথে জড়িত টাইরেস ডেভন হ্যাসপিল (২১) কে গ্রেফতারের জন্যে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। জানাজার আগেই ঘাতককে পাকড়াওয়ের মধ্যদিয়ে শোকার্ত পরিবারকে কিছুটা হলেও স্বস্তি প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় শনিবার প্রদত্ত ঐ বিবৃতিতে। মিডিয়া এবং সর্বসাধারণের প্রতি আহবান জানিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, একেবারেই পারিবারিকভাবে ফাহিমকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্যে জানাযা ও দাফনে কেবলমাত্র আমন্ত্রিতরাই আসবেন। 

এদিকে, নৃশংসভাবে এ হত্যাকাণ্ডের জন্যে অভিযুক্ত ফাহিমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারি টাইরেস হ্যাসপিল (২১) নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। হ্যাসপিলের এটর্নি স্যাম রোবার্টস এ তথ্য জানিয়েছেন ১৯ জুলাই রবিবার। লিগ্যাল এইড সোসাইটির এই এটর্নি উল্লেখ করেছেন যে, হ্যাসপিল আগে গুরুতর কোন অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না। এই মুহূর্তে আমরা দায়েরকৃত অভিযোগের ব্যাপারে একেবারেই প্রথম পর্যায়ে রয়েছি। প্রকৃত সত্য জানতে অনেক জটিল পথ পাড়ি দিতে হবে এবং এজন্যে সময়েরও দরকার। আমরা হ্যাসপিলের এটর্নি হিসেবে সর্বসাধারণের প্রতি আহবান রাখছি উদারতা বজায় রাখতে। 

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা উদঘাটনে সক্ষম হয়েছেন যে, ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালনকালে হ্যাসপিল ফাহিমের একাউন্ট থেকে ৯০ হাজার ডলার চুরি করেন। এ ঘটনা জানা সত্বেও ফাহিম তাকে পুলিশে দেয়ার পরিবর্তে কিস্তিতে চুরিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন। এটি ফাহিমের জন্যে কাল হয়েছে বলেও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তদন্ত কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান হ্যাসপিলও ফাহিমের মতোই মেধাবি এবং সে কারণেই ১৬ বছর বয়সেই তাকে চাকরি দিয়েছিলেন ফাহিম।  

Leave A Reply

Your email address will not be published.